Logo
Logo
×

অর্থনীতি

রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনাই মুদ্রানীতির লক্ষ্য : গভর্নর

Icon

স্টাফ রিপোর্টার :

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৫, ১০:১৭ পিএম

রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনাই মুদ্রানীতির লক্ষ্য : গভর্নর

ছবি-সংগৃহীত

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এই মুদ্রানীতিতে নীতিগত সুদের হার (রেপো রেট) ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্য মাত্রার উপরে থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত কড়াকড়ি অবস্থান বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনাই এই মুদ্রানীতির লক্ষ্য। বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, টাকার অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, বিনিয়োগ স্থবিরতা ও খেলাপি ঋণের উচ্চ হার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিলস্থ প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর, মুখ্য অর্থনীতিবিদ, পলিসি উপদেষ্টা, মুখপাত্র ও ব্যাংকের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে এলেও তা এখনো লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি রয়েছে। জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার কমে ৮.৪৮ শতাংশে নেমে এলেও তা এখনো ৬.৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এ অবস্থায় নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এখন সুদহার কমালে মূল্যস্ফীতির ওপর আবারও চাপ তৈরি হতে পারে। তাই আপাতত রেপো হার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে স্থায়ীভাবে না নামা পর্যন্ত নীতি সুদহার কমানো হবে না। আমাদের টার্গেট হলো মূল্যস্ফীতি ৩ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশে না নামানো পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হবো না।

এই মুদ্রানীতিতে শুধু রেপো হারই নয়, স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) হার ১১.৫০ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) হার ৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এসএলএফ হারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিতে পারে, আর এসডিএফ হার হলো ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা আমানতের ওপর প্রাপ্য সুদ। তবে, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে এসডিএফ হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৮ শতাংশে আনা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায়বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য ব্যবস্থাপনায় কিছুটা নমনীয়তা প্রদর্শন করতে চাইছে।

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭.২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯.৮০ শতাংশ। বাস্তবে গত জুনে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৬.৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও ঋণগ্রহণে মন্থরতা চলছে। অন্যদিকে, সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২০.৪০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের ১৭.৫০ শতাংশের তুলনায় বেশি। গত বছর এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল ১৪.২০ শতাংশে।

গভর্নর বলেন, ব্যালেন্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্তের ফলে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বাজারে ঢুকেছে। এতে করে শেয়ারবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বর্তমানে দিনে দুইবার রেফারেন্স এক্সচেঞ্জ রেট প্রকাশ করা হচ্ছে, যাতে বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকে এবং বাজারে স্বচ্ছতা বজায় থাকে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, খেলাপি ঋণ, দুর্বল সুশাসন ও আর্থিক জবাবদিহির অভাব ব্যাংক খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এসব দূর করতে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা চালু করা হবে। একই সঙ্গে অডিটেড কোয়ালিটি রিভিউয়ের ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক পুনর্গঠনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে দুই দিক থেকে কাজ করতে হয়চাহিদা ও সরবরাহ। চাহিদা কমাতে আমরা সুদহার বাড়িয়েছি, ফলে ব্যাংক ঋণ কমেছে এবং সরকারের বাজেট ঘাটতিও সীমিত রাখা হয়েছে। সরবরাহে বিঘ্ন যেন না ঘটে, সে জন্য ডলার সংকট সত্ত্বেও বিদ্যুৎ, সার ও জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমদানিতে বাধা দিইনি।

গভর্নর বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামবে বলে আমরা আশা করছি। তখন আমরা ধাপে ধাপে সুদহার হ্রাসের কথা বিবেচনা করব। ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা দেশে একটি সুসংহত মুদ্রানীতি কাঠামো গড়ে তুলতে পারব, যা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি এবং মূল্য স্থিতি রক্ষায় কার্যকর হবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন