Logo
Logo
×

অর্থনীতি

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সমস্যায় জর্জরিত

Icon

স্টাফ রিপোর্টার :

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৪ পিএম

দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সমস্যায় জর্জরিত

ছবি-সংগৃহীত

শুধু ব্যাংকই নয়, সমস্যায় জর্জরিত দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও (এনবিএফআই)। ৩৫টির পাঁচটি ছাড়া বাকিগুলো সমস্যাগ্রস্ত। তাই ব্যাংক মার্জার করলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংকটগ্রস্ত এনবিএফআই অবসায়নে সরকারের খরচ হতে পারে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল ব্যয়ের বেশিরভাগটাই সরকারের বাজেট থেকে আসবে বলে জানা গেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, বেশিরভাগ এনবিএফআই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রাহক নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছে। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে জামানতকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল। এনবিএফআইগুলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু বেশিরভাগই সেই লক্ষ্যে ব্যর্থ হয়েছে। সামনে একটি শক্তিশালী এনবিএফআই খাত প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাদের বেশিরভাগই ভালো করছে না।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৫ থেকে ২০টি সংকটগ্রস্ত এনবিএফআই অবসায়নের পরিকল্পনা করছে। এই পদক্ষেপে সরকারি কোষাগার থেকে অন্তত ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় চরম দুর্বলতা রয়েছে। এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিপুল অর্থ আত্মসাতের জন্য কুখ্যাত পিকে হালদার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে ভালো অবস্থানে থাকা ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর প্রতিও সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে।

সংকটগ্রস্ত এনবিএফআইগুলো হলো- সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (আইআইডিএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি), ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও এফএএস ফাইন্যান্স। এর মধ্যে সাতটির খেলাপি ঋণের হার ৯০ শতাংশেরও বেশি।

এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বর্তমানে ২০টি এনবিএফআই লাল তালিকায় রয়েছে, যার বেশিরভাগই আর কার্যকর নেই। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলুপ্ত করে খাতটিকে পরিশুদ্ধ করাই মূল লক্ষ্য।

গভর্নর মনসুর একটি বড় চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেছেন। বর্তমান আইন অনুযায়ী, এনবিএফআইয়ের আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার আইনত বাধ্য নয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন সংশোধিত ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স অ্যাক্টে এনবিএফআইগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা আমানতকারীদের ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের সুরক্ষা দেবে। এই পরিবর্তনের লক্ষ্য হলো ভবিষ্যতে আমানতকারীদের জন্য অন্তত আংশিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা

বাংলাদেশের ৩৫টি এনবিএফআইয়ের মধ্যে মাত্র চার-পাঁচটি বর্তমানে ভালোভাবে চলছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। সমস্ত এনবিএফআইয়ের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ (২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা) খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকৃত।

চিহ্নিত ২০টি সংকটগ্রস্ত এনবিএফআইয়ের হাতেই গত ডিসেম্বর শেষে ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার ঋণ ছিল। উদ্বেগজনকভাবে এর মধ্যে ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা অর্থাৎ ৮৩ দশমিক ১৬ শতাংশ খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে, যার বিপরীতে জামানত রয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ২০টি এনবিএফআইকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে জানতে চেয়েছে, কেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে না। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ ২২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক ও ২৬ শতাংশ ব্যক্তিগত আমানত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কিছু এনবিএফআই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নোটিসের জবাব দিয়েছে, বাকিরাও শিগগিরই দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। যাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হবে না, তাদের অবসায়নের আওতায় আনা হবে। তবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কিছুটা সময় লাগবে।’

তিনি আরও বলেন, এই এনবিএফআইগুলোতে ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলনামূলক ভালো হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। এই ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ ৪৯ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ মাত্র ৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ।

এদিকে এনবিএফআই ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বপরিকল্পিত পাঁচটি সংকটগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংক একীভূত করতে প্রাথমিক পর্যায়ে আরও ১৫-২০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে। ফলে মোট আর্থিক বোঝার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩০ হাজার কোটি টাকা।

এই একীভূতকরণের জন্য প্রাথমিক মূলধন আসবে সরকারি বাজেট থেকে, যা পুনঃমূলধনীকরণ প্রকল্পের অধীনে বন্ডের মাধ্যমে সরবরাহ করা হতে পারে। প্রথমদিকে সরকার সুদের অর্থ পরিশোধ করবে, আর আসল টাকা থাকবে বন্ড আকারে। এই তহবিল ব্যাংকের মূলধন ভিত্তিকে শক্তিশালী করবে।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হলো এই পুনর্গঠিত ব্যাংকগুলোকে ধীরে ধীরে দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তর করা এবং পুঁজিবাজারে শেয়ার ছেড়ে দিয়ে প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংকগুলোর মূলধনে পুনঃবিনিয়োগ করা।

একীভূতকরণের জন্য চিহ্নিত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি, এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা একটি বহিরাগত অডিটে এই ব্যাংকগুলোর ঋণের ওপর ৬০-৯৫ শতাংশ পর্যন্ত উদ্বেগজনক খেলাপি হার প্রকাশ পেয়েছে।

গবেষণা ও নীতিসহায়ক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএফ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘এখন অবসায়ন কীভাবে করবে, সেটা দেখার বিষয়। এই ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যাতে গ্রাহকের আস্থা নষ্ট না হয়, সেটার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আমানতকারীদের অর্থ অবশ্যই ফেরত দেওয়া উচিত।’ সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন