অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দুয়ারের অনিয়ম, বড় লোকসানে অগ্রণী ব্যাংক
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৫, ১১:২৩ এএম
ছবি : সংগৃহীত
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমে তৃতীয় পক্ষ ‘দুয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড’-এর সম্পৃক্ততায় ব্যাপক অনিয়ম ও আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের আগেই ২০১৫ সালের মে মাসে অগ্রণী ব্যাংক দুয়ারের সঙ্গে এজেন্ট ব্যাংকিং চুক্তি করে। ওই চুক্তি তিন বছর গোপন রাখা হয় এবং পরে অনুমোদনপত্র প্রকাশ পেলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং দুয়ারকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হয়।
দুয়ারের সঙ্গে এই অংশীদারিত্বের ফলে ব্যাংকের সরাসরি ক্ষতি হয়েছে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি সফটওয়্যার সেবা, স্টেশনারি, এজেন্ট পয়েন্ট স্থাপনসহ নানা খাতে ২২৭ কোটি টাকার বিল নিয়েছে, যার অনেকটাই চুক্তির বাইরে এবং খাতওয়ারি হিসাববিহীন ছিল।
তাছাড়া দুয়ারের নিজস্ব ‘সেলোস্কোপ’ সফটওয়্যার ব্যবহারে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর চিঠি দিয়ে অগ্রণী ব্যাংককে কড়া আপত্তি জানায় এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়।
অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে, দুয়ারের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সাবেক কর্মকর্তা তাদের আত্মীয়স্বজনকে এজেন্ট পদে নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকের মূল শাখাগুলোর লেনদেন কমিয়ে দেন, যাতে লোকসানের পরিবেশ তৈরি হয়।
চুক্তির মেয়াদ শেষে ২০২৫ সালের ১৯ জুন দুয়ার নতুন শর্ত মানতে না চাওয়ায় ব্যাংকের নতুন পরিচালনা বোর্ড ৫৬৭টি এজেন্ট পয়েন্ট বন্ধ করে দেয় এবং ২২ জুন থেকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, “আগের বোর্ড আমলে দুয়ারকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন বোর্ড ইতিমধ্যে অনিয়ম ঠেকাতে পদক্ষেপ নিয়েছে।”
ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, “সাবেক কর্মকর্তাদের প্রভাবের কারণে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছিল। আমরা তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিয়েছি।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, “দুয়ারের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত অগ্রণী ব্যাংকের নিজস্ব। তবে তারা আগের কার্যক্রমে নিয়মভঙ্গ করেছে—এ বিষয়টি আমাদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।”
বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংক নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন এজেন্ট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম গড়তে উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে ভবিষ্যতে কোনো তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভর করা হবে না।



