দেশজুড়ে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে চড়াও পুলিশ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩৯ পিএম
দেশজুড়ে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে চড়াও পুলিশ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। রাজপথ থেকে তাদের হটানোর চেষ্টা করলে উভয় পক্ষে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। কোথাও কোথাও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ সময় কমপক্ষে ৫০ জনকে আটকও করা হয়।
মার্চ ফর জাস্টিস নামে নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামেন আন্দোলনকারীরা। সারা দেশে জেলায় জেলায় আদালতের সামনে অবস্থান নেন তারা। কিছু স্থানে সড়ক অবরোধ করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। বাধা হয়ে দাঁড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে অবশেষে করা হয় লাঠিচার্জ।
বুধবার দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালনে আন্দোলনকারীরা একাট্টা হয়। সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, গুম ও খুনের প্রতিবাদে এ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরই অংশ হিসেবে সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা; জড়ো হন দোয়েল চত্বরে। সেখানে ওঠে স্লোগানের ঝড়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার কথা জানান তারা। অন্যদিকে, বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে আইনজীবীরা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করেন।
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনে বরিশালের সদর রোডে প্রথমে জড়ো হন আন্দোলনরতরা। বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের বাধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যান আন্দোলনরতরা। শেষমেশ বাধ্য হয়ে তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পরবর্তীতে সদর রোড থেকে কাকলী সিনেমা হলের সামনে আবারও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি এবং ছাত্রসমাজের নয় দফা দাবিও তুলে ধরেন তারা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়ে লাঠিচার্জ শুরু করে। ধরে নেয়ার চেষ্টা করা হলে আন্দোলনরতরা একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। পুলিশের বাধা অতিক্রম করেই পরবর্তীতে কোর্ট চত্বরে অবস্থান নেন তারা। এ সময় পুলিশের পাশাপাশি রাজপথে বিজিবিও অবস্থান নেয়। এ ঘটনায় অনন্ত ১০ জন আহত হয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পদযাত্রা কর্মসূচিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। সকাল সাড়ে ১১টায় নগরের কোতোয়ালির লালদীঘির পাড় এলাকার জেলা পরিষদ ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
পরে আইনজীবীদের একপক্ষ আন্দোলনে যোগ দিলে তাদের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা আদালত চত্বরে অবস্থান নেন। পুলিশ আধাঘণ্টার মধ্যে সড়ক থেকে সরে আসতে তাদের আল্টিমেটাম দেয়। এ সময় আইনজীবীদের একটি দল মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের সম্মিলিত দলটি মিছিল নিয়ে আইনজীবী ভবনের সামনে অবস্থান নেয়।
এর আগে, পুলিশ বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। এ সময় অন্যরা এসে তাদের ছিনিয়ে নেয়। যদিও পুলিশ দুই ছাত্রীকে আটক করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ঠাকুরগাঁওয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। জেলা শহরের একাত্তরের অপরাজেয় চত্বরে আন্দোলনকারীরা জড়ো হলে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। পরে আন্দোলনরতরা তা ভেঙে মূল শহরের দিকে গিয়ে আদালত চত্বরে অবস্থান নেন। সেখানেও ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ বাধা দিলে তা ভেঙে ফেলা হয়। এতে মারমুখী অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় কয়েকজন আহত হন। পরে আদালত চত্বরের সামনের সড়কেই অবস্থান নিয়ে দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
এদিকে, যশোরেও নয় দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলের চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা আবারও জড়ো হয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হলে পুলিশের দাবি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও খুলনার রয়্যাল মোড় এলাকায় আন্দোলনকারীদের জড়ো হতে দেয়নি পুলিশ; বরং আটক করা হয় ৩০ জনকে। দিনাজপুরে শহীদ মিনার চত্বরে বৈষম্যবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালীন ১০ জনকে আটক হয়। এদিকে, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা ও একাত্মতা ঘোষণা করে ঘণ্টাব্যাপী চলা অবস্থান কর্মসূচিতে নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের অর্ধশতাধিক শিক্ষক।