Logo
Logo
×

সারাদেশ

চৌদ্দগ্রামে বিরল প্রজাতির নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে মাতোয়ারা প্রকৃতিপ্রেমীরা

Icon

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১০:২৩ এএম

চৌদ্দগ্রামে বিরল প্রজাতির নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে মাতোয়ারা প্রকৃতিপ্রেমীরা

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা কমপ্লেক্সের হিসাব বিভাগের অফিসের পেছনে নাগলিঙ্গমের দুটি গাছে ফুল ফুটেছে। ছবি: সংগৃহীত

নাগলিঙ্গম—বিরল ও সৌন্দর্যমণ্ডিত এক ফুল। এর সুভাসে এখন মাতোয়ারা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকা। ঋতুরাজ বসন্তে এ ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য ও সুগন্ধ টানছে অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমীকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা কমপ্লেক্সের হিসাব বিভাগের অফিসের পেছনে দুটি নাগলিঙ্গম গাছ দাঁড়িয়ে আছে নীরবে, অথচ প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে দিচ্ছে মোহময় ঘ্রাণ ও রঙিন ফুল। প্রতিবছর গাছ দুটিতে নিয়মিতভাবেই ফুল ও ফল ধরে। অনেকে না জেনে ছবি তুলছেন, কেউ কেউ ভিডিও করছেন—নির্ভেজাল কৌতূহল থেকেই।

নাগলিঙ্গমের ইংরেজি নাম Cannonball Tree এবং বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis, যা Lecythidaceae পরিবারের সদস্য। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাই এর আদিনিবাস, তবে ভারতে দুই-তিন হাজার বছর ধরে এই গাছ চাষ হওয়ায় অনেকেই ভারতকে এর উৎপত্তিস্থল মনে করেন।

বৃক্ষটির বিশেষত্ব হলো—এর ফুল ফুটে গাছের শাখায় নয়, সরাসরি কাণ্ড থেকে! লতানো ডাঁটার মতো অংশে থোকা থোকা কুঁড়ি ধরে, যেখান থেকে উজ্জ্বল গোলাপি ও হালকা হলুদ রঙের মনকাড়া ফুল ফোটে। ফুলের ঘ্রাণ রাতভর স্থায়ী হয় এবং তা এতটাই প্রবল যে সকাল পর্যন্তও বাতাসে সুগন্ধ ছড়িয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালজুড়ে এই গাছে ফুল ফোটে।

প্রতিটি গাছে প্রায় এক হাজার পর্যন্ত ফুল ধরতে পারে। ফুলের দৈর্ঘ্য ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাপড়িগুলো গোল, মাংসল এবং ভেতরে গাঢ় গোলাপি, বাইরে পাণ্ডুর হলুদ রঙের। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো এর পরাগচক্র, যা দেখতে ঠিক যেন সাপের ফণা।

এই গাছে জন্মায় বেলের মতো গোলাকৃতির ভারী ফল, যা ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং ৯–১৮ মাসে পরিপক্ব হয়। ফল মাটিতে পড়ে ফেটে গেলে কটু গন্ধ ছড়ায়। তবে এগুলো হাতির প্রিয় খাবার হওয়ায় এর আরেক নাম—হাতির জোলাপগাছ।

উপজেলা কমপ্লেক্সে ঘুরতে আসা কলেজছাত্রী সাদিয়া ইসলাম বলেন, “নাগলিঙ্গম সম্পর্কে বইয়ে পড়েছিলাম। বাস্তবে দেখে ও ঘ্রাণ নিয়ে অভিভূত। এত মিষ্টি ঘ্রাণ কল্পনায়ও আসেনি।”

চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞানের অতিথি প্রভাষক দীপক কুমার রায় বলেন, “নাগলিঙ্গম ফুলের গঠন ও রং অত্যন্ত ব্যতিক্রমী। বিশেষ করে এর কাণ্ড থেকে ফুল ফোটা ও সাপের ফণার মতো পরাগচক্র একে প্রকৃতির বিস্ময় করে তুলেছে।”

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, “দুটি নাগলিঙ্গম গাছ পুরো উপজেলা কমপ্লেক্সের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। গাছগুলো সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বীজ থেকে নতুন চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

নির্মল প্রকৃতির এক আশ্চর্য উপহার এই নাগলিঙ্গম। রক্ষণাবেক্ষণ ও সচেতন পরিচর্যার মাধ্যমে এ ফুলকে আরও বিস্তৃত করা সম্ভব। শুধু স্থানীয় নয়, সারা দেশের ফুলপ্রেমীদেরও দেখা মিলবে এমন এক অদ্ভুত সুন্দর ফুলের।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন