Logo
Logo
×

সারাদেশ

ঈশ্বরগঞ্জে গরু চুরির হিড়িক, নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কৃষকরা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১০:১৮ পিএম

ঈশ্বরগঞ্জে গরু চুরির হিড়িক, নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কৃষকরা

ছবি : সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় গরু চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও সংঘবদ্ধ চোরচক্রের হানা পড়ছে, ফলে আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা। অনেকেই রাতভর জেগে গবাদিপশুর নিরাপত্তা দিতে বাধ্য হচ্ছেন, তবুও মিলছে না স্বস্তি।

সবশেষ, উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের দশাশিয়া গ্রামে রোববার রাতের আঁধারে চার কৃষকের গোয়ালঘর লক্ষ্য করে চক্রবদ্ধ চোরেরা একযোগে হানা দেয়। এক রাতেই তারা চুরি করে নেয় ১১টি গরু, যার বাজারমূল্য প্রায় ১২ লাখ টাকা। চুরি হওয়া গরুগুলোর মালিকদের মধ্যে রয়েছেন আবু বকর সিদ্দিক (৬টি), তার ভাই মো. সুলতান (১টি), আবুল বাসার (২টি) এবং মো. ইসরাফিল (২টি)।

এর আগে, মাইজবাগ ইউনিয়নের কুল্লাপাড়া গ্রামে গত মঙ্গলবার রাতে তিন ভাই—আবু সাঈদ ভূঁইয়া, আব্দুল লতিফ ভূঁইয়া এবং আবুল কাশেম ভূঁইয়ার গোয়ালঘর থেকে ৮টি গরু চুরি হয়, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭ লাখ টাকা।

চুরির ঘটনার পর কুল্লাপাড়ার ভুক্তভোগীরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও চোর বা চুরি যাওয়া গরু সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ, যার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

আবু বকর সিদ্দিক জানান, “এই গরুগুলোই ছিল আমার জীবনের সব সঞ্চয়। ঈদে বিক্রির জন্য বিশেষভাবে একটি ষাঁড় প্রস্তুত করেছিলাম। সেই অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ আর জমি বর্গা ছাড়ানোর কথা ছিল। এখন সব শেষ।”

এর আগেও চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বড়হিত ইউনিয়নের পাড়া পাচাশি গ্রামে আব্দুল মতিনের তিনটি গরু চুরি করে চোরেরা ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়। এ গরুগুলোর মূল্য প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মতিনের ছেলে শরিফুল ইসলাম জানান, খামার শুরুর জন্য তিনি বোন জামাইয়ের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন, কিন্তু মাত্র ৫ মাসের মধ্যে তার সব বিনিয়োগ চলে গেল চোরদের হাতে।

এছাড়া, গত বছরের ২৪ নভেম্বর একই ইউনিয়নের পুরাহাতা গ্রামে আব্দুল গনি ও আব্দুল সাওয়ারের চারটি গরু চুরি হয় একই কৌশলে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংঘবদ্ধ চোর চক্র গভীর রাতে পিকআপ ভ্যানে এসে রাস্তার পাশে থাকা খামার থেকে গরু তুলে নিয়ে চলে যায়। অনেক সময় তারা গ্যাস কাটার দিয়ে তালা খুলে চুরি করে। এসব চোরেরা দ্রুত ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ হাইওয়ে ব্যবহার করে এলাকা ত্যাগ করে বলে ধারণা করা হয়।

নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব ও পুলিশের গড়িমসির কারণে কৃষকরা চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। গরু পালন নিয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক খামারি। এমনকি চুরি ঠেকাতে রাত্রিকালীন পাহারা দিলেও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে জানান স্থানীয়রা।

একই বাড়ি থেকে এক রাতে এতগুলো গরু চুরির ঘটনায় এলাকায় চরম উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। আবু সাঈদ ভূঁইয়া বলেন, “রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম, সকালে উঠে দেখি তালা ভাঙা, ভেতরে গরু নেই। মাথায় হাত।”

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি ওবায়দুর রহমান জানান, “আঠারবাড়ির দশাশিয়া এলাকায় গরু চুরির ঘটনায় আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠিয়েছি। মাইজবাগের চুরির বিষয়েও আমরা অভিযোগ পেয়েছি। চুরি যাওয়া গরু উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মনে করছেন, পুলিশের দায়িত্বে গাফিলতির কারণেই চোর চক্র এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ঈশ্বরগঞ্জে গরু চুরি রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন