Logo
Logo
×

সারাদেশ

পাগলা মসজিদে এবার মিলল রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা

Icon

সাব্বির হোসেন, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৬ পিএম

পাগলা মসজিদে এবার মিলল রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা

পাগলা মসজিদের দান বাক্স থেকে পাওয়া গে‌ছে রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা। ছবি : যুগেরচিন্তা২৪

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে এবার রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা পাওয়া গেছে। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে।

গণনা শেষে শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকাল পৌনে ৬টার দিকে রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সকালে মসজিদের ১১টি লোহার দানবাক্স খোলা হয়। এতে পাওয়া যায় ২৮ বস্তা টাকা। পরে মসজিদ কমপ্লেক্সের দুই তলায় নিয়ে টাকা গণনার কাজ শুরু হয়। এসব বস্তাভর্তি টাকা গণনার কাজে অংশ নেয় পাগলা মসজিদ মাদ্রাসা ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার মোট ২৫০ জন ছাত্র এবং রূপালী ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ৩২০ জন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ছাড়াও মসজিদ-মাদ্রাসার ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও অংশগ্রহণ করেছিলেন। এসময় উপস্থিতি ছিলেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী।

এ নিয়ে এই পর্যন্ত মোট দানের পরিমাণ দাঁড়ালো ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৩ টাকা, যা স্থানীয় একটি ব্যাংকে জমা রয়েছে।

এবার ৪ মাস ১২ দিন পর মসজিদের ৯টি লোহার দানবাক্স ও দুটি ট্যাংক খোলা হয়। এর আগে, গত (৩০ নভেম্বর) ৩ মাস ১৪ দিন পর ১১টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। ২৯ বস্তায় তখন রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া যায়। 

এরও আগে গত ১৭ আগস্ট ৩ মাস ২৭ দিন পর পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্সে ২৮ বস্তা টাকা। এতে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। গত (২০ এপ্রিল) ৩ মাস ২৭ দিন পর ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। ২৭ বস্তায় তখন রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া একটি ডায়মন্ডের নাকফুলসহ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া যায়।

জানা গেছে, প্রতি তিন মাস পরপর দানবাক্সগুলো খোলা হলেও এবার রমজানের কারণে ৪ মাস ১২ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। দানবাক্সে পাওয়া টাকার পরিমাণ এবার অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করেন। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে তাঁরা ছুটে আসেন। এ মসজিদের দানবাক্সে যে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়, তা জেলার আর কোনো মসজিদে পাওয়া যায় না। টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলংকারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। তা ছাড়া প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে লোকজন। আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাঁদের জীবনে পাওয়ার আনন্দ, না পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করেন। এমনকি শত্রুকে ঘায়েলের দাবিও থাকে কোনো কোনো চিঠিতে।

বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।

মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে এ মসজিদের অবস্থান। প্রাপ্ত দানের টাকা থেকে পাগলা মসজিদ এবং এই মসজিদ কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত মাদ্রাসা, এতিমখানা ও কবরস্থানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানায় সহায়তা করা হয়। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজেও এই ফান্ড থেকে টাকা খরচ করা হয়।

মসজিদটিতে এবার আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন