কুড়িগ্রামের সঙ্গে নীলফামারী ও রংপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
কুড়িগ্রাম সদরের কালির আলগা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেনের ঘরে পানি থইথই। দুই দিনে তার এলাকায় পানি বেড়েছে তিন হাত। বেশিরভাগ ঘরবাড়িরই একই অবস্থা। চারদিক পানিতে একাকার। ঘরে পানি, মাঠে পানি, ঘাটে পানি।
বন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে কুড়িগ্রামের এ অঞ্চলের মানুষ। গত তিন দিনে এই এলাকার বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। কুড়িগ্রামের সঙ্গে নীলফামারী ও রংপুরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তাছাড়া ফেনী, নোয়াখালী অঞ্চলে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেখানকার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে সিলেটে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যায় আক্রান্ত এলাকা থেকে প্রতিবেদকদের পাঠানো খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের ১১০টি পানি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৮৩টিতে পানি বেড়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্রের পানি হাতিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর নুনখাওয়ায় ১৪ ও চিলমারিতে ৯, সুরমা নদীর কানাইঘাটে ৮৭, কুশিয়ারার অমলশিদে ১৩৫, একই নদীর শেওলায় ৪৩, শেরপুর-সিলেটে ২০, মারকুলিতে ৪০, মনু নদের মৌলভীবাজার পয়েন্টে ৪৮, সোমেশ্বরীর কলমাকান্দায় ৫৩ ও খোয়াই নদের বল্লাহ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। বুধবার (৩ জুলাই) চিলমারী ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েকটি উপজেলার হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এক সতর্কবার্তায় জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চল ও এর উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এ সময় উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার নদ, ধরলা ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
কুড়িগ্রাম সদরের বতুয়াতলি মূসার চরের সিদ্দিক জানান, তার গ্রামে ৪০টির বেশি পরিবারের বাস। সবকটি পরিবারের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। পোরার চরের বাসিন্দা ইনছুর আলী জানান, বন্যায় পরিস্থিতি খারাপ। এক রাতেই এই চরে চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত পানিবৃদ্ধির ফলে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নসহ চিলমারী উপজেলার নদের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে এলাকার বাসিন্দারা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ত্রাণসহায়তা বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। জেলাজুড়ে ৪ শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।