ছবি : সংগৃহীত
টানা চারদিনের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। হোটেল-মোটেলগুলোতে ঠাঁই নেই অবস্থা। বিচের সমুদ্রস্নান, বিচবাইক, ঘোড়া আর জেটস্কি রাইডে মেতেছে নানা বয়সের মানুষ।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে। বিশেষ করে চাকরিজীবীদের জন্য বিজয় দিবসের ছুটি নিয়ে এই সময়টি অবকাশ যাপনের সেরা সুযোগ হয়ে উঠেছে। তাই দেশের নানা প্রান্তের মানুষ এবারও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ছুটে এসেছেন। অনেক চাকরিজীবী আগামীকাল রোববার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চারদিন ছুটি নিয়ে ভ্রমণে বের হয়েছেন।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডিসেম্বর মাস জুড়েই পর্যটকের চাপ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় পরিবার নিয়ে অবকাশ যাপনে কক্সবাজারকে বেছে নিয়েছেন অনেকে। গত কয়েকদিন ধরে সৈকত ও আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে লেগেছে পর্যটকের ভিড়।
হোটেল-মোটেল কক্ষও শতভাগ বুকিং হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে। শহরের অভিজাত ও মাঝারি মানের হোটেল, রিসোর্ট, কটেজের কক্ষ আগাম বুকিং চলছে। চলতি মাসে অনেক হোটেলেই বুকিং শেষ হয়েছে।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে বলে জানান কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান। তিনি জানান, চলতি মাসে বেশির ভাগ হোটেল-মোটেল, রিসোর্টে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং আছে। কোনো হোটেল মালিক যাতে পর্যটকের বাড়তি চাপের সুযোগ নিয়ে অতি ভাড়া আদায় করতে না পারে তার জন্য সার্বক্ষনিক মনিটরিং রয়েছে।
শৈবাল ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, দেশের অনেকেই ভারতে ঘুরতে যেতেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেতে পারছেন না। ফলে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকের চাপ থাকবে। কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় ৫০০ হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ, রিসোর্টে দেড় লাখের মতো পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী ও লাবণী পয়েন্টে পর্যটকদের ঢল নামে। পর্যটকরা বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ঘোড়ায়, ওয়াটার বাইক ও বিচ বাইকে চড়ে সমুদ্র দর্শনে মেতে উঠেছেন। অনেকে লোনাজলে স্নানে নেমে আনন্দ করছেন।
পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাখো পর্যটক সমুদ্র দর্শনে মেতেছেন। সমুদ্র ছাড়াও জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ভিড় করছেন পর্যটকরা।
গাজীপুর থেকে আসা সৈকত বাপ্পি বলেন, পরিবারের সঙ্গে কক্সবাজারে আসাটা সবসময়ই বিশেষ অনুভূতি। সমুদ্রের ঢেউ আর প্রকৃতি মন ভালো করে দেয়।
ঢাকার রামপুরা থেকে সপরিবারে আসা সৈয়দ শামসুজ্জামান বলেন, সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় আমিও অফিস থেকে কয়েকদিনের ছুটি নিলাম। এরপর চলে এলাম চিরচেনা কক্সবাজারে। সুযোগ পেলে সেন্টমার্টিন ঘুরে আসবো সপরিবারে।
কুমিল্লার লাকসাম থেকে নববধূকে নিয়ে আসা বায়োজিদ হাকিম বলেন, প্রতিবছর মা-বাবার সঙ্গে এলেও এবার নববধূ নিয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রের নীল জলরাশি দেখতে এলাম। শীতের সময়েও কক্সবাজার সমুদ্রে টিউব নিয়ে ভেসে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা। ৩ দিনের জন্য এসেছি। কাল ইনানীর পাথরে বিচ দেখতে যাবো।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ তৎপর। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম বলেন, পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
তবে পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপের কারণে শহরে যানজটও বেড়েছে। প্রধান সড়ক, মেরিন ড্রাইভ, এবং কলাতলী এলাকায় দীর্ঘসময় যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ফুটপাত ও সড়কের পাশে বসা দোকানপাট চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা।
সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর জানান, শুক্রবারই প্রথম ২ হাজার পর্যটক নিয়ে চারটি জাহাজ সেন্টমার্টিন গেছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজগুলোতে শতভাগ আসন বুকিং থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
পর্যটকরা মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী ও পাটুয়ারটেক পাথুরে সৈকত, শামলাপুর, টেকনাফ, রামুর বৌদ্ধপল্লী, শৈলদ্বীপ মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া ও চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভিড় জমাচ্ছেন।