দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিশোরগঞ্জের নিকলীতে, বিপর্যস্ত জনজীবন
কিশোরগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এদিন সারাদেশের মধ্যে নিকলীতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে হাওর অধ্যুষিত এই উপজেলায় তাপমাত্রা নেমে আসে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনের মধ্যভাগে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিলছে। তবে ঘন কুয়াশার ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে কাজের জন্য দিনমজুররা বাইরে যেতে পারছেন না। কৃষকেরা দেরিতে মাঠে কাজে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, হিম বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষগুলো। সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। সড়কে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। শীত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মানুষ খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। জ্বর, হাঁচি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন অনেকে। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রবিবারের তুলনায় আগামীকাল সোমবার শীতের তীব্রতা সামান্য বাড়তে পারে। জেলার ওপর দিয়ে বর্তমানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলতি মাসজুড়েই শীতের প্রভাব থাকবে এবং শীতের অনুভূতি কমার সম্ভাবনা নেই। এতে করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন।
নিকলী উপজেলা সদরের মহরকোনা সংলগ্ন কামালপুর গ্রামের রহিমসহ বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তাঁরা মাঠে যান সকাল ৭টার আগে। কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে এখন মাঠে যেতে ৯টা থেকে ১০টাও বেজে যাচ্ছে। এখন মাঠে বোরো ধান রোপণ ও পরিচর্যার কাজ চলছে।
দিনমজুর রেজাউল করিম বলেন, ‘ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজের জন্য শহরে আসতে হয়। এত শীতে সাইকেল চালিয়ে শহরে পৌঁছানো কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। হাত অবাস হয়ে পড়ে। শীতে কাজও তেমন একটা নেই। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সেই জন্য কাজও পাচ্ছি না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
রিকশা চালক খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘সময় এখন প্রায় দুপুর ২টা। সূর্যের আলো এখনো দেখা যায়নি। অন্যদিনে এ সময়ের মধ্যে তিন থেকে চারশো টাকা রোজগার হতো। আর আজকে এখন পর্যন্ত একশ টাকায় কামাই করতে পারিনি। শীতের কারণে লোকজন বাহিরে বের হচ্ছে না। পরিবার পরিজনদের নিয়ে খুব খারাপ সময় পার করছি।’
মোটরসাইকেল আরোহী মামুন মিয়া বলেন, ‘ফজরের নামাজ আদায় করে বের হয়েছি। এক ঘণ্টার রাস্তা পার হতে দেড় ঘণ্টা লাগলো। আরও পাঁচ কিলোমিটার সড়ক বাকি আছে। শীতের কারণে বাইক জোরে চালানো যাচ্ছে না।’
মালবাহী ট্রাকচালক কামাল হোসেন বলেন, ‘কুয়াশার কারণে সড়ক দেখা যায় না। সে কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। গাড়ির গতি সামান্য রেখে চালাতে হয়। আর এ কারণে সময়মতো মালামাল পৌঁছে দিতে পারছি না।’
বাড়বাজারের ব্যবসায়ী রফিক বলেন, ‘শীতের জন্য মানুষ কম চলাচল করছে বাইরে। দোকান খোলা থাকলেও বিক্রি নেই। যাদের প্রয়োজন তারাই বাজারে আসছেন। শীতের তীব্রতা অনেক বেশি দিনে ও রাতে।
নিকলী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম মাছুম এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রবিবার নিকলীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং শীতের তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে।



