Logo
Logo
×

সারাদেশ

কুড়িগ্রামে শায়িত হলেন সুদানে নিহত দুই শান্তিরক্ষী

Icon

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম

কুড়িগ্রামে শায়িত হলেন সুদানে নিহত দুই শান্তিরক্ষী

ছবি : সংগৃহীত

সুদানের আকাশে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে দুই তরুণ সেনা সদস্য জীবন দিলেন, তাঁদের শেষ ঠিকানা হলো জন্মভূমির মাটি। দীর্ঘ প্রবাসী দায়িত্ব শেষে নয়ফিরলেন কফিনে। চোখের জলে ভেজা বিদায়ের মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রামের দুই গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুই শহীদ শান্তিরক্ষী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সুদানের আবেই অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মধ্যে কুড়িগ্রামের দুই সন্তান, মমিনুল ইসলাম (৩৮) ও শান্ত মন্ডল (২৬)।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে জানাজা শেষে নিজ নিজ গ্রামের কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়।

এর আগে রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে হেলিকপ্টারযোগে দুই শহীদের মরদেহ কুড়িগ্রামে পৌঁছায়। উলিপুর উপজেলার হেলিপ্যাডে লাশবাহী হেলিকপ্টার অবতরণ করলে সেখানে নেমে আসে শোকের নীরবতা। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁদের গ্রামের বাড়িতে।

শহীদ শান্ত মন্ডল কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাটমাধাই ডারারপাড় গ্রামের সন্তান। বাবা সাবেক সেনা সদস্য (মৃত) নুর ইসলাম মন্ডল, মা সাহেরা বেগম। আর মমিনুল ইসলাম ছিলেন উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের পারুলেরপাড় গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শহীদ হন এবং আটজন আহত হন। রবিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পারুলেরপাড় গ্রামে মমিনুল ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। জানাজায় অংশ নেন পরিবার-পরিজন, গ্রামবাসী, স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি ও কুড়িগ্রাম-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুবুল আলম সালেহী। জানাজা শেষে বাড়ির পাশের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। মমিনুল ইসলাম রেখে গেছেন স্ত্রী ও দুই কন্যা। বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট মেয়ের বয়স মাত্র চার বছর। পরিবার জানায়, মাত্র ৩৩ দিন আগে তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দিতে সুদানে গিয়েছিলেন।

ছেলেহারা বাবা আব্দুল করিম কাঁপা গলায় বলেন, “আমার ছেলে খুব ভালো মানুষ ছিল। আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন বলেই হয়তো শহীদের মৃত্যু দিয়েছেন। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।”

কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন,“মমিনুলই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। এখন আমরা অসহায়। সরকার যদি আমার ছোট ছেলেটার একটা চাকরির ব্যবস্থা করত, তাহলে পরিবারটা বাঁচত।”

অপরদিকে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নিজ গ্রামে শান্ত মন্ডলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বড় ভাই সেনা সদস্য সোহাগ মন্ডলসহ স্বজন ও এলাকাবাসী জানাজায় অংশ নেন। সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দল তাঁকেও গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে বাবার কবরের পাশে নিজ বাড়ির আঙিনায় চিরনিদ্রায় শায়িত হন তরুণ এই সেনা সদস্য।

শান্তর বড় ভাই সোহাগ মন্ডল জানান, শান্ত ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর শান্তিরক্ষী মিশনে সুদানে যান। এক বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। স্ত্রী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

দুই গ্রামে তখন শুধু কান্না আর নীরবতা। রাষ্ট্রের জন্য জীবন দেওয়া এই দুই সন্তানের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষ শুধু একটি প্রশ্নই করছে, ফিরে এলো পতাকা, ফিরল না মানুষ।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন