তারা এখন বুঝতে পারছে আমি তাদের ঘরের একটি মোটা খুঁটি ছিলাম : আখতারুজ্জামান
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫০ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদ্য জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দান করা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন বলেছেন, আজ হঠাৎ করে দেখছি আমার দাম বেড়ে গেছে। বিএনপির অনেক বন্ধু ফেসবুকে আমাকে নিয়ে লেখা লেখি করছে। এতে আমি শুকরিয়া জানাই। তারা এখন বুঝতে পারছে আমি তাদের ঘরের একটি মোটা খুঁটি ছিলাম। আমি নিজে দল ছেড়ে আসিনি, আপনারাই আমাকে বের করে দিয়েছেন। গত তিন বছর আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেননি, এমনকি বিয়ের দাওয়াতও দেননি। আজ আমাকে গালাগালি করছেন—এতেও ভালো লাগে, কারণ বুঝি আপনারা আমাকে নিয়ে ভাবছেন।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা কলেজ মাঠে আয়োজিত কৈফিয়ত সভা ও জুলাই যোদ্ধা শহীদ শরিফ ওসমান হাদির শোক সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় আখতারুজ্জামান রঞ্জন বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি— যে কথায় জামায়াতে ইসলামী কষ্ট পায়, সেই কথা আমি বলবো না। প্রয়োজনে আমার জবান কেটে দেব। কারণ তারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। আমি তাদের ভালো-মন্দের সাথেই থাকবো। জামায়াত তাদের রাজনীতি করবে, এগিয়ে যাবে
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। যদি তারা আমাকে আশ্রয় না দিত, তাহলে হয়তো আমাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে হতো। এই বয়সে নতুন করে ঘর বা দল গড়ার সামর্থ্য আমার নেই। আমার ঘরে চাল নেই, চুলা নেই—আমি কীভাবে নতুন ঘর বানাবো। এই বয়সে কেউ আমাকে আশ্রয় দেবে না। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই কৃতজ্ঞতা আজীবন থাকবে।
জামায়াতের কাছে তিনটি আবদার তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি চাই দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজিমুক্ত, সন্ত্রাস ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ। আমরা আর চাঁদা দিতে চাই না, রাস্তাঘাটে নিরাপদে চলতে চাই। দ্বিতীয়ত, সত্য প্রকাশ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা চাই, বিশৃঙ্খলা নয়। শান্তির মাধ্যমেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা হোক। তৃতীয়ত, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মর্যাদা চাই—মানুষ মানুষকে সম্মান করবে।
সভায় তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সবাই মিলেমিশে বসবাস করবে। আমি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবো না। জামায়াত যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আমাকে কোনো ভালো জায়গায় রাখবে।
এসময় তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যার বিচার চেয়ে বলেন, আমরা একজন ত্যাগী হাদিকে হারিয়েছি। আমরা এই হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যারা এই হত্যার সাথে জড়িত প্রয়োজনে পাতাল থেকে তুলে নেতাদের বিচার করতে হবে। আমরা শুধু বিচারই চাই না শরিফ ওসমান হাদির রেখে যাওয়া কাজ বাস্তবায়ন করতে চাই।
সভায় মেজর রঞ্জনের ভক্ত-সমর্থকসহ স্থানীয় হাজারো মানুষ অংশ নেন। সভা শেষে শরিফ ওসমান হাদির রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী–পাকুন্দিয়া) আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল, উপজেলা আমির অধ্যাপক মোজাম্মেল হক জোয়ারদার, সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদুল হাসানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর সকালে ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের হাতে সদস্য ফরম জমা দেন তিনি। এ সময় ফুল দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান রঞ্জনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর।
জানা যায়, আক্তারুজ্জামান রঞ্জন ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে প্রার্থী হয়ে টানা দুইবার কিশোরগঞ্জ–২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় কেবল কটিয়াদী উপজেলা নিয়েই এ আসন গঠিত ছিল। ২০০৮ সাল থেকে কটিয়াদীর সঙ্গে পাকুন্দিয়া উপজেলাকে যুক্ত করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদের কাছে পরাজিত হন। পরে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ নিয়ে তিনি বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কার হন। এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ–২ (কটিয়াদী–পাকুন্দিয়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করেও তিনি পরাজিত হন।
উল্লেখ্য, মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান রঞ্জন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্ব। স্বাধীনতার পর তিনি রাজনীতি ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিবেদিত রাখেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে দুইবার কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও ন্যায্য স্বীকৃতি আদায়ে আজও সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন।



