Logo
Logo
×

সারাদেশ

৫ বছরেও শেষ হয়নি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

Icon

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম

৫ বছরেও শেষ হয়নি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ

ছবি : সংগৃহীত

৫ বছরেও শেষ হয়নি খুলনার বেতগ্রাম-কয়রা আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। জমি অধিগ্রহণের অর্থ পরিশোধে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জটিলতাসহ সড়কের দুপাশে বিত্তশালীদের বাণিজ্যিক ভবন অপসারণে ব্যর্থ হওয়ায় তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সংকট। আইনি জটিলতার দীর্ঘসূত্রিতায় থমকে আছে কাজ। 

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর তথ্য মতে, খুলনার ৩ উপজেলা এবং সাতক্ষীরার একটি উপজেলার ওপর দিয়ে বেতগ্রাম-তালা-কপিলমুনি ও পাইকগাছা-কয়রার প্রায় ৬০ কিলোমিটার সড়কটি দুই লেনে উন্নীত করণে প্রকল্প নেয়া হয়। এ কারণে সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি বাঁক সরলীকরণে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। ২০২০ সালে শুরু হয় কার্যক্রম। প্রায় ৫ বছরে দু’দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থবৃদ্ধি হলেও দৃশ্যমান হয়নি কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি। 

সম্প্রতি,সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক কপিলমুনি বাজারের অংশ। ভুল নকশায় সড়কের বাঁকসরলীকরণ নিয়ে সম্প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে খুলনা অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো এই বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সাধারণ মানুষ। 

স্থানীয়দের অভিযোগ,জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে দূর এবং উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় বিভিন্ন পয়েন্টে চলে ভাগ-বাটোয়ারার হিসেব। আছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুবিধাভোগী মহল। এই চক্রের যোগসাজশে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ‘কাদা খাওয়া এমপি’ হিসেবে পরিচিত খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (বর্তমানে দুদকের মামলায় পলাতক) আখতারুজ্জামান বাবুই মূলত খলনায়ক।

মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর ভবনসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে কপিলমুনি বাজারের সড়ক সরলীকরণ নকশা পরিবর্তন করে দেন বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি গত ৬ ডিসেম্বর শনিবার বর্তমান নকশায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে তোপের মুখে পড়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দুদিনের অভিযানে ভেঙে দেয়া হয় কপিলমুনি সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার দোতলা ভবন। একপর্যায়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

স্থানীয়দের দাবি, বর্তমান নকশায় উচ্ছেদ করে সড়ক সোজা করতে গেলে উল্টো আরো দুটি বিপদজনক বাকের সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে ডিগ্রি মাদরাসা এবং হাসপাতালের সামনে সড়ক দুর্ঘটনা এবং জীবন ঝুঁকি আরও বাড়বে। অথচ উল্টো পাশের ভবনের অংশবিশেষ অপসারণ করা গেলে প্রকৃতভাবেই সড়কটি সোজা হয়। একই সঙ্গে সরকারের বেঁচে যায় অধিগ্রহণের কোটি কোটি টাকা। 

কারণ এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে, নকশা পরিবর্তন করে রক্ষা করতে যাওয়া আলোচিত ভবনটি (নির্মাণ বিপণি) সরকারি পেরিফেরি সম্পত্তির ওপর গড়ে ওঠা। কিন্তু সেই ভবন অপসারণ না করে উল্টোপাশে উচ্ছেদের জোর তৎপরতা চলছে। এতে একদিকে যেমন সড়কটি সোজা হচ্ছে না। অন্যদিকে, অধিগ্রহণের জন্য সরকারকে খরচ করতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। পাশাশাপি অনেকে হারাচ্ছেন বসবাসের ভবন, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠন। এতে অংশ নেন খুলনা জেলা শাখার সভাপতিসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী। পরে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হলে গণশুনানি করা হয়। গণশুনানিতে বেরিয়ে আসছে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে। স্থানীয়দের বক্তব্যে উঠে আসে ভয়ঙ্কর তথ্য। এ সময় বলা হয়, ফকিরবাসা মোড়ের বাঁক সরলিকরণের অনৈতিক সুবিধাভোগী চক্রের সঙ্গে যুক্ত কপিলমুনি সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার (সাময়িক বরখাস্ত) অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার। 

জানা যায়, ভবনসহ মাদরাসার জমি অধিগ্রহণের প্রায় অর্ধকোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের অভিপ্রায়ে কৌশলে একটি রেজুলেশন পাশ করানোর চেষ্টা করেন তিনি। যেখানে মাদরাসার অর্থ তিনি নিজে ইচ্ছে মতো ব্যবহার করার ক্ষমতা ভোগ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়। এরপরই মাদরাসার দ্বিতীয়তলা ভবন ভাঙা শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। যদিও অধ্যক্ষের সেই অপকৌশল বাস্তবায়নের আগেই বিভিন্ন অভিযোগে ইতোমধ্যেই তিনি সাময়িক বরখাস্ত। প্রকাশ্য জনসমক্ষে এলাকার সচেতন নাগরিকদের এমন বক্তব্যে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।

স্পষ্ট হয়, কেন নকশা পরিবর্তন করে উল্টোপাশে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কেন সড়ক সোজা না হলেও মাদরাসা ভবন ভেঙে দেয়ার এই আয়োজন চলে। কেন একটি বাঁক সোজা করতে আরও দুটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সৃষ্টির পাঁয়তারা। কেন পূর্বের নকশা অনুযায়ী পেরিফেরি সম্পত্তির ওপর গড়ে ওঠা বিত্তশালীর ভবন রক্ষায় সুবিধাভোগী মহলের সম্মিলিত এই আয়োজন!

গণশুনাতিতে এমন অপ্রিয় সত্য উন্মোচনে সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত ও এলাকাবাসীর চোখ খুলে যায়। চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা বলেন, জমি লাগলে দেবো কিন্তু সড়ক সোজা করতে হবে। একটি মাত্র ভবন বাঁচাতে এই প্রহসন কিছুতেই মেনে নেবেন না বলে উল্লেখ করেন তারা। 

খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপংকর দাশ এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হকের উপস্থিতিতে চলে গণ শুনানি কার্যক্রম। দীর্ঘ শুনানিতে কপিলমুনি বাজারে সড়ক সরলিকরণে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের অসারতা তুলে ধরেন এলাকাবাসী। বলেন, প্রভাবশালী একটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মালিকের ভবন বাঁচাতে ভুল নকশায় ফের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলে কিছুতেই মেনে নেবেন না তারা। বর্তমান নকশায় সড়কের বাঁক সরলিকরণ করা হলে আরও ঝুঁকিপূর্ণ দুটি বাঁকের সৃষ্টি হবে। এতে সরকারি হাসপাতাল ও ডিগ্রি মাদরাসার সামনে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। অবিলম্বে নকশা পরিবর্তন করে সড়ক সোজা করার দাবি জানান সাধারণ মানুষ। শুশানি শেষে, জটিলতা নিসরনে আশ্বাস দেন জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন। 

তবে, অদৃশ্য কারণে গণেশ উল্টে গেছে। ১৮ ডিসেম্বর কপিলমুনির ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি ও ভবনের মালিকসহ এলাকাবাসীর একটি প্রতিনিধি দল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সাক্ষাত করেন। এ সময় মাঠের পর্যবেক্ষণ ভুলে পুরনো বয়ান হাজির করেন তিনি। নকশায় পরিবর্তন না এনে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখার বিষয়ে ঈঙ্গিত দেন তিনি। এতে আবারও পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। স্থানীয়দের দাবি, যেকোনো মূল্য সড়কের উন্নয়ন কাজ সঠিক নকশায় বাস্তবায়ন করা হোক। না হলে গণঅনাস্থা কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ে আবারও মাঠে নামবে এলাকাবাসী।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন