তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও নিরাপত্তা নিয়ে যা জানালেন সালাহউদ্দিন
অনলাইন ডেস্ক :
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এর মধ্যেই ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন তোলপাড় হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঘিরে নিরাপত্তা ইস্যুটি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে।
এদিকে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলাকে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না। তার ভাষায়, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে ১০ তারিখ, তারপর দিনই বাংলাদেশে একজন সম্ভাব্য জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর ওপরে হামলা হলো। হামলার ধরন দেখে বোঝা যায় এটা পেশাদার শ্যুটারের কাজ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখবো। সুদৃঢ় করবো। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক হতে পারে, সামনে নির্বাচন বিভিন্ন রকমের রাজনৈতিক বিতর্ক হবে কিন্তু আমরা ওই পর্যায়ে বিতর্ক করবো না, যাতে আমাদের ঐক্য বিনষ্ট হয়।’
দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও তার নিরাপত্তা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যাতে নিরাপদে থাকে, সে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য সরকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছি আমরা।’
তিনি যোগ করেন, ‘এ বিষয়টা আজ এখানে আলোচনা হয়নি, অবশ্যই বিষয়টা আমাদের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা দলীয়ভাবেও চেষ্টা করবো, সরকারকেও আহ্বান জানাবো যাতে উনার (তারেক জিয়া) নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘কোন আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে, সরকারের দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব আছে। জনগণের সচেতনতা জরুরি।’ এ সময় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যৌথ বাহিনী, সরকার, জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ এই ধরনের ঘটনা আমরা বন্ধ করতে পারব।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের চেতনা হচ্ছে জুলাই-২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা। প্রত্যাশা, জনআকাঙ্ক্ষা এইটাকে আমরা ঊর্ধ্বে তুলে ধরবো। জাতীয় ঐক্য হিসেবে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে অুটট রাখবো। এই জায়গায় আমাদের কোন আপস নেই।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিবাদকে অবশ্যই আমরা এই বার্তা দিতে চাই, এই জাতীয় কোনো ধরনের হামলা করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। প্রতিহত করতে পারবে না।’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরের পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত খুব কাছ থেকে ওসমান হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যার পর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন।
হাদির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গতকাল রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, ‘বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বুলেট হাদির মস্তিষ্কের কাণ্ড বা ব্রেন স্টেম পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’ হিসেবে বিবেচিত।’ তিনি বলেন, ‘আগামী ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, আর এ অবস্থায় কোনো ধরনের নতুন ইন্টারভেনশন করা হবে না।’
তিনি আরও জানান, ‘হাদি এখন ‘খুবই ক্রিটিক্যাল’ অবস্থায় আছেন এবং আগামী ৭২ ঘণ্টা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।’ বর্তমানে তাকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে চিকিৎসকেরা এখনই আশার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।



