গভীর নলকূপে পড়ে প্রাণ হারানো সাজিদকে শেষ বিদায়
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
গ্রামজুড়ে ভারী নীরবতা। বাতাসে কান্নার গন্ধ। কোয়েলহাট পূর্বপাড়ায় প্রতিটি ঘরের ওপর নেমে আসে শোকের ছায়া। মসজিদের মাইকে একটিই ঘোষণা বারবার ভেসে আসে, যেন হৃদয়ে পাথর বেঁধে দেয়—‘রাকিব উদ্দীনের দুই বছরের শিশু সাজিদ আর নেই।’
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নেককিড়ি কবরস্থান-সংলগ্ন মাঠে জানাজা শেষে শেষ ঠিকানায় শায়িত করা হয় গভীর নলকূপে পড়ে মৃত্যু হওয়া শিশু সাজিদকে। পুরো গ্রামের মানুষ তখন থমথমে। কেউ মাঠে যায়নি, দোকানপাটও খুলে নি। সবাই একবার দেখতে চাইল সেই ছোট মুখটা, যে মুখে প্রতিদিন হাসি ফুটত, এখন নিস্তব্ধ।
এর আগের বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে, গভীর নলকূপের গর্ত থেকে উদ্ধার হওয়া সাজিদের নিথর দেহ নিয়ে আসা হয় তার গ্রামে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ৪০ ফুট মাটি খুঁড়ে ৩২ ঘণ্টার পুরো অভিযান শেষে রাত ৯টায় তাকে উদ্ধার করেন। কিন্তু তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক জানিয়ে দেন তার মৃত্যুর সংবাদ।
জানাজার মাঠে সকালেই ভিড় জমে যায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার চোখে অশ্রুর রেখা। কেউ ফিসফিস করে প্রার্থনা করছেন, কেউ নিঃশব্দে হাত তোলে আকাশের দিকে। সাদা কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট দেহটি সামনে আসতেই চারদিকে কান্নার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। সাজিদের মা বারবার ছুটে যেতে চাইছেন সন্তানের দিকে, স্বজনরা তাকে ধরে রেখেছেন, কিন্তু ভেঙে পড়া কান্না থামাতে পারেননি কেউ।
জানাজার ইমাম কাজী মাওলানা মিজানুর রহমান দোয়া তুলতেই হাজারো মানুষ হাত তুলে প্রার্থনায় অংশ নেন। সাজিদের মাগফিরাতের জন্য প্রার্থনা, আর পরিবারকে ধৈর্য দান করার আবেদন প্রতিটি কণ্ঠে।
জানাজা শেষে যখন ছোট্ট কফিনটি কবরের দিকে এগোচ্ছিল, তখন মনে হচ্ছিল গ্রামের সব শব্দ যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। কেবল কান্না আর দীর্ঘশ্বাসের ভারী সুর ভেসে আসছে।
গ্রামবাসীরা বলছেন, এমন একটি শিশুর জানাজায় পুরো গ্রামের মানুষ একসঙ্গে অংশ নিয়েছে—এ দৃশ্য তারা জীবনে দেখেননি।
উল্লেখ্য, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যায় সাজিদ। দীর্ঘ সময়ের অভিযান শেষে তাকে উদ্ধার করা হলেও বাঁচানো যায়নি।



