Logo
Logo
×

সারাদেশ

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ফিরছে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শুকতারা যুব সংসদ

Icon

নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০২ পিএম

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ফিরছে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শুকতারা যুব সংসদ

নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব শুকতারা যুব সংসদ আবারো ফিরছে দেশের পেশাদার ফুটবলের শীর্ষ মঞ্চে। প্রতিষ্ঠার ৫০বছর পূর্তির এই সময়ে ক্লাবটি দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ২০২৫-২৬ মৌসুমে অংশ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের(বাফুফে) ক্লাব লাইসেন্স পেয়েছে ক্লাবটি। গত ৯ ডিসেম্বর বাফুফের লাইসেন্সিং বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাবটিকে এ অনুমোদন প্রদান করে। 

ক্লাব কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এটি শুধু শুকতারার নয়- নারায়ণগঞ্জের হাজারো ফুটবলপ্রেমীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, শ্রম ও অবদানের জাতীয় স্বীকৃতি। এটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য গর্বেরও। নতুন করে সকলে মিলে ফুটবলের গৌরবকে নতুন উচ্চতায় তুলে নেওয়ার প্রত্যাশায়। 

ফুটবলপ্রেমী তরুণদের হাত ধরে স্বপ্নযাত্রার শুরু:

১৯৭৪ সালের ১৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের জামতলা এলাকায় এক ঝাঁক তরুণ ফুটবলপ্রেমীর নিয়ে যাত্রা শুরু হয় শুকতারার। সরঞ্জাম ও সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও খেলার প্রতি ভালোবাসাকে  পুঁজি করে এগিয়ে যেতে থাকে ক্লাবটি। পাঁচ দশক পেরিয়ে সেই ছোট্ট উদ্যোগ আজ জেলায়- দেশে পরিচিত শুকতারা একটি ক্রীড়া ব্র্যান্ডে পরিনত হয়েছে। 

জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বহু সাফল্য এনে শুকতারা নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। দেশের ফুটবল ইতিহাসে রেখেছে উল্লেখযোগ্য অবদান। 

চার দলে গড়ে ওঠে খেলোয়াড় তৈরির ধারাবাহিকতা:

বর্তমানে শুকতারা যুব সংসদের অধীনে রয়েছে চারটি সক্রিয় ফুটবল দল। শুকতারা জুনিয়র ক্রীড়া চক্র(প্রথম বিভাগ), মাজেদ বাবুল স্মৃতি একাদশ ও শাহীন স্পোটিং ক্লাব(দ্বিতীয় বিভাগ)-এই চারটি ক্লাব নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার তালিকাভুক্ত ক্লাব।

১৯৭৪ইং সাল থেকে অদ্যাবধি নারায়ণগঞ্জ প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগে ক্লাবগুলো নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। এই চার দলের মাধ্যমে শত শত খেলোয়াড় প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরী করেছে। শুকতারা ফুটবলার তৈরির অন্যতম ধারাবাহিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত করেছে।

শুকতারা থেকে উঠে এসে জাতীয় দল এবং দেশের বড় ক্লাব- মোহামেডান, আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা, ভিক্টোরিয়া, ওয়ারি, ব্রাদার্স ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দলে সাফল্যের সঙ্গে খেলেছে 

জাতীয় দল ও দেশের বড় ক্লাবগুলোতে খেলেছে

এই ক্লাবের খেলোয়াড়রা। 

তাঁদের মধ্যে আছেন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় গোলাম গাউস, রেজাউল করিম লিটন, লক্ষ্মী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, টুটুল(প্রয়াত) ও রিপন আবাহনী ক্রাড়ী চক্র, মোশাররফ হোসেন ও আনিছুর রহমান জুয়েল মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্র, আজাদ স্পোটিং ক্লাবে খেলেছেন জোবায়ের নিপু, তপন, আব্দুল হালিম, হাফিজ, রহমত, রাকিবুল হাসান রাকিব, ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাব ও  ওয়ারী ক্লাব শহীদুল হক টুটু, হাবিবুর রহমান বাচ্চু ও প্রয়াত মুক্তার হোসেন, শাব্বির আলম খন্দকার, বিকেএসপির ডানা কাপ ও গোথিয়া কাপ বিজয়ী সাবেক খেলোয়াড় মাহমুদুল হক শাহীন, 

সহ আরও অনেকে খেলোয়াড় বিদেশি লিগেও খেলেছেন।

ক্লাবের কর্মকর্তারা বলেন, ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা ও চরিত্র গঠনের ওপর জোর দেওয়ার কারণেই শুকতারার খেলেয়াড়রা জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য পেয়েছে। আগামীতে জাতীয় দল গঠনে পাইপলাইনে খেলোয়াড় সরবরাহ ও তৈরিতে শুকতারা পূর্বের ন্যায় তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। 

শুকতারা যুব সংসদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য:

নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শুকতারা যুব সংসদ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফুটবলে ধারাবাহিক সাফল্য দেখিয়ে এসেছে। ১৯৭৭ সালে নারায়ণগঞ্জ দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের যাত্রা শুরু। পরের বছর শুকতারা জুনিয়র ক্রীড়া চক্র দল একই সাফল্য অর্জন করে।

১৯৮০-এর দশকে ক্লাবটি দেশের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখায়। ১৯৮০ সালে জুনিয়র দলের প্রথম বিভাগে রানার্স আপ হওয়া, একই সময়ে কক্সবাজারে শহীদ স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হুমায়ুন কবির স্মৃতি গোল্ডকাপ ও দোহার গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন হওয়া তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে।

১৯৮৯ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে চারবার রানার্স আপ হয় শুকতারা যুবদ সংসদ ক্লাবটি। ২০০৪ সালে প্রথম বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরপর দুই বছর নিটল টাটা জাতীয় ফুটবল লীগে নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিত্ব করে চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে অংশ গ্রহণ করে শুকতারা যুব সংসদ।

ক্লাবটি অংশ নিয়েছে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টের মধ্যে, দেওয়ানগঞ্জ শহীদ স্মৃতি, মানিকগঞ্জ কুলফা গোল্ডকাপ, রাজবাড়ীর ভজ গোবিন্দ লাল শিল্ড ও টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ শুকতারা যুব সংসদ দল অংশগ্রহণ করে।

২০০৮ সালে আবারও প্রথম বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০০৯ সালে বসুন্ধরা চ্যাম্পিয়ন ক্লাব কাপ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে শুকতারা যুব সংসদ অর্জন করে দেশের পেশাদার ফুটবলে (বি-লিগ) খেলার যোগ্যতা।

বাফুফের লাইসেন্স অনুমোদন : পাঁচ দশকের শ্রমের স্বীকৃতি

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লীগে অংশগ্রহণের জন্য বাফুফের কঠোর শর্ত পূরণ করতে হয় অবকাঠামো, আর্থিক সক্ষমতা, ক্রীড়া কমিটি, কোচিং স্টাফ, বয়সভিত্তিক দল, জবাবদিহিমূলক প্রশাসনসহ নানা ধাপ। এসব শর্ত পূরণের পরই শুকতারা ৯ ডিসেম্বর বাফুফের লাইসেন্স পেয়েছে।

ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোজাম্মেল হক তালুকদার বলেন, শুকতারা নারায়ণগঞ্জবাসীর আবেগ ও ভালোবাসার জায়গা। দ্বিতীয় বার বাংলাদেশ লীগে খেলা মানে আবার নতুন স্বপ্নের যাত্রা। সকলের ভালোবাসা ও সহযোগিতা নিয়েই শুকতারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

শুকতারা ও জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় বাফুফে কার্যকরী কমিটির সদস্য গোলাম গাউস বলেন, শুকতারা ক্লাবের জার্সি পরে আমি খেলে বড় হয়েছি। আজ শুকতারার অগ্রগতিতে আমিসহ নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি ফুটবলপ্রেমীই গর্বিত। নারায়ণগঞ্জবাসীর মান রক্ষার্থে শুকতারা ভালো দল গঠন করবে। 

বি লীগে খেলার অনুমোদনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সমর্থক ও ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই আশা প্রকাশ করেন, ৫০ বছরের গৌরব নিয়ে শুকতারা আবারো ফুটবলে নতুন শক্তির ভিত্তি গড়ে তুলবে। 

আগামী দিনের স্বপ্ন : পেশাদারত্বের নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশ লীগে অংশ গ্রহণই নয়, প্রতিযোগিতামূলক দল হিসেবেই মাঠে নামতে চায় শুকতারা। পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে আগামী দিনের শতবর্ষের ভিত্তি তৈরি করতে চায় ক্লাবটি।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে শুকতারা যুব সংসদ।

ক্লাবের কর্মকর্তা মেহেবুবুল হক তালুকদার টগর বলেন, শুকতারা আগেও যখন বি লীগ খেলেছে, দেশের যেখানেই খেলা হয়েছে- দর্শকদের ভিড় ছিল। এবারও ফুটবলের সেই উত্তাপ ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য। 

শুকতারা বি লীগে খেলার অনুমোদন পাওয়া  নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য গৌরবের উল্লেখ করে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান জুয়েল বলেন, ক্লাব সভাপতি মোজাম্মেল হক তালুকদারের নেতৃত্বে জেলার ফুটবলের মান উন্নয়নে শুকতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে। এবার সেই ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্যবাহী শুকতারা ক্লাবকে বাফুফের অনুমোদন নারায়ণগঞ্জের ফুটবলের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। 

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন