শারীরিক প্রতিবন্ধী আলিফের পাশে মানবিক ডিসি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রামের মুহাম্মদ আলী জাফরী ও তাফহীমা আকতার দম্পতির সন্তান আলিফ বিন জাফরী জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী।
কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি জাফরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং গাজীবারিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বর্তমানে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।
বাবার মৃত্যুর পর আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন তাফহীমা আকতার। ছেলের জন্য একটি ট্রাইসাইকেল কেনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও অন্য সব মায়ের মতো তিনিও চান— প্রতিবন্ধী সন্তানটিও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একদিন সংসারের হাল ধরবে।
সারাদেশে ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আলিফ ও তাঁর মায়ের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করলেন।
চন্দনাইশ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আলিফকে একটি ট্রাইসাইকেল তুলে দেন তিনি।
ট্রাইসাইকেল পেয়ে উচ্ছ্বসিত মেধাবী আলিফ জেলা প্রশাসকের মানবিক উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে আলিফ বলেন, “ডিসি স্যার আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।”
একই অনুষ্ঠানে হজরত শাহসুফি মমতাজিয়া এতিমখানার ৪০ জন শিশুকে পোশাক ও শিক্ষা উপকরণ উপহার দেন জেলা প্রশাসক।
মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, “মানবসেবা নিয়ে ডিসি স্যারের প্রতিটি কথা আমাদের খুব ভালো লেগেছে। এতিম শিশুদের দেখে তিনি অত্যন্ত উৎফুল্ল হন।
নিজ হাতে শিশুদের উপহার বিতরণ করায় তারা ভীষণ আনন্দিত হয়েছে। ব্যস্ততার মাঝেও অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি অনুপ্রেরণামূলক কথা বলেছেন।”
ডিসি জাহিদুল ইসলাম বলেন,“মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও মূল্যবোধ না থাকলে কোনো মূল্যই থাকে না। অন্যের সমস্যাকে অনুভব করতে পারলেই সৃষ্টির সেরা জীব হওয়া যায়।”
চন্দনাইশ উপজেলা পরিদর্শনের অংশ হিসেবে সকালে তিনি চন্দনাইশ থানা পরিদর্শন করেন এবং উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে থানার কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সভায় তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনসহ উপজেলা পর্যায়ের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
মতবিনিময় সভা শেষে উপজেলা অডিটোরিয়ামে উপকারভোগীদের মাঝে সরকারি সহায়তা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। এসময় প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইলচেয়ার ও ট্রাইসাইকেল, সুবর্ণ নাগরিক কার্ড, কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ, এতিম শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও পোশাক এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
দুপুরে চন্দনাইশ উপজেলার সম্প্রসারিত নতুন প্রশাসনিক ভবন উদ্বোধন এবং কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রথম দিনের পরিদর্শন কার্যক্রম শেষ করেন তিনি। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব হোসেন ও সহকারী কমিশনার ঝুন্টু বিকাশ চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
পরে জেলা প্রশাসক পটিয়া উপজেলা পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, "১৮ নভেম্বর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করছি। আজকেও চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলা পরিদর্শন করলাম। কিভাবে সামনের দিনগুলোতে কাজ করতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিচ্ছি।
জাতির প্রত্যাশা—একটি ফ্রি, ফেয়ার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই লক্ষ্যেই আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
এসময় পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



