দশম গ্রেড চেয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কর্মবিরতি, ভোগান্তিতে রোগীরা
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫৭ পিএম
দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে দুই ঘণ্টাব্যাপী কর্মবিরতি পালন করেছেন কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। কর্মবিরতি শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পরবর্তী কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
কর্মবিরতিতে বক্তব্য রাখেন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব ইনচার্জ তানভীর আহমেদ, ফার্মাসিস্ট মো. আনিসুর রহমান, ফার্মাসিস্ট সাহিদা পারভীন।
হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, সকাল ৮টা থেকে প্রতিদিনের ন্যায় বহির্বিভাগে সেবা প্রদান থেকে শুরু পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রক্ত পরিসঞ্চালন শুরু হয়। এর এক ঘণ্টা পর কর্মবিরতি শুরু করেন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এ সময় কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়। তাদের এই কর্মবিরতিতে জরুরি সেবা চালু থাকলেও অন্যান্য সেবায় ব্যাহত হওয়ায় সেবা নিতে আসা রোগীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
এদিকে তাদের কর্মসূচি চলাকালে হাসপাতালে প্যাথলজি, ব্লাড ব্যাংক, রেডিওলোজী সহ বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে আসা রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে। অপরদিকে ফার্মেসি বিভাগে গিয়েও দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। এ সময় ওষুধ নিতে আসা রোগীর স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন মাহবুব আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকালে চিকিৎসক দেখে ভাঙা পায়ের এক্সরে করতে দিয়েছে, সাড়ে ১০টার দিকে এসে দেখি এখানে কেউ নেই, শুনেছি তারা কর্মবিরতিতে গিয়েছে। সকাল থেকেই বসে আছি, কেউ কোনো কাজ করছে না।
এ সময় বক্তারা বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, সচিবালয় ক্লিনিক, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বঙ্গভবন মেডিকেল সেন্টার, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত ইনস্টিটিউটে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা বছরের পর বছর ধরে চরম বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, অন্যান্য ডিপ্লোমাধারীরা যেমন— ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, ডিপ্লোমা নার্স ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদরা এরই মধ্যে ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত হলেও, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা এখনো সেই ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। ফলে স্বাস্থ্য খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পেশার কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। নিজেদের মর্যাদা রক্ষার দাবিতে বাধ্য হয়ে রোগীদের সেবা বন্ধ রেখে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলের সদিচ্ছার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অযৌক্তিক অজুহাতের কারণে বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘসূত্রতা করা হচ্ছে। এর ফলে তারা আর্থিক, সামাজিক ও পেশাগতভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। দ্রুত ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবি পূরণ না হলে আগামী দিনে সারা দেশব্যাপী আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ফার্মাসিস্ট মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমরা অনেকবার আন্দোলন করেছি, অনেকবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমাদের ফাইল অদৃশ্য কারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকা পড়ে আছে। এরমধ্যে সরকারকে আমরা আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, আমাদের কথা রাখেননি। আমাদের মর্যাদা লড়াইয়ের জন্য সারাদেশের মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা আজ সোচ্চার। আমাদের দাবি মেনে না নেয়া হলে ৪ আগামীকাল কমপ্লিট শাটডাউনে চলে যাব। এ সময়ে রোগীদের ভোগান্তি হলে সেই দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
মেডিকেল ল্যাব ইনচার্জ তানভীর আহমেদ বলেন, আমাদের দাবি যৌক্তিক সেটি স্বাস্থ্যন্ত্রণালয়ও জানে। আমরা দেখেছি অন্যান্য সেক্টরের ডিপ্লোমাধারীদের দশম গ্রেড দিলেও আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেও বঞ্চিত। সরকার বার বার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন করেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতা থাকলেও মাত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছার অভাবে আটকে আছে। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আজ আমরা দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি করেছি। এর মধ্যে দাবি মেনে না নেয়া হলে আগামীকাল ৪ ডিসেম্বর কমপ্লিট শাট ডাউন কর্মসূচি পালন করা হবে। আমরা কর্মবিরতি দিয়ে সাধারণ রোগীদের ভোগান্তিতে ফেলতে চাই না। সরকারের কাছে দাবি আমাদের ১০ গ্রেডে উন্নীত করা হোক। তা না হলে কমপ্লিট শাট ডাউন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো আমরা।
উল্লেখ্য, এর আগে, গত ৩০ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত একই দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এদিকে দাবি বাস্তবায়নে বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার কমপ্লিট শাট ডাউন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।



