কুড়িগ্রামে বাল্যবিবাহের হার ৫১ শতাংশ, সবচেয়ে ঝুঁকিতে চরাঞ্চলের মেয়েরা!
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
কুড়িগ্রামে বাল্যবিবাহের হার এখনো উদ্বেগজনকভাবে বেশি—পুরো জেলায় এ হার ৫১ শতাংশ। বিশেষ করে চরাঞ্চল ও দূরবর্তী গ্রামগুলোই বাল্যবিবাহের অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব ও সামাজিক সচেতনতার ঘাটতিকে এ পরিস্থিতির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে সরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ আয়োজিত ‘বাল্যবিবাহ কমাতে বিচারিক সম্পৃক্ততা ও আইনি কাঠামো’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফ্রেন্ডশিপের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (লিগ্যাল) অ্যাডভোকেট মো. আতিকুজ্জামান। প্রধান অতিথি ছিলেন- কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মোসাম্মৎ ইসমত আরা।
মূল প্রবন্ধে আতিকুজ্জামান বলেন, “কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বাল্যবিবাহের হার অত্যধিক। ২০২২ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, জেলার ৫১ শতাংশ মেয়েই বাল্যবিবাহের শিকার। নারী শিক্ষায় পশ্চাৎপদতা এবং পরিবারগুলোর আর্থিক দুরবস্থাই এর প্রধান কারণ।” তিনি আরও বলেন, “ফ্রেন্ডশিপ তাদের প্রকল্প এলাকায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়িয়েছে। মেয়েদের পাশাপাশি তাঁদের অভিভাবকদের দিকেও আমরা বিশেষভাবে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমও জোরদার করা হয়েছে।”
সভায় বক্তব্য দেন কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, “চরাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ায় বাল্যবিবাহের প্রবণতাও বেশি। কেন কুড়িগ্রামে এ হার বেশি—এটি নিয়ে ভাবতে হবে। মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং চরবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ছাড়া বাল্যবিবাহ কমবে না।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা ও দায়রা জজ মোসাম্মৎ ইসমত আরা বলেন,
“যেসব এলাকায় বাল্যবিবাহ বেশি, বিশেষ করে চরাঞ্চলে, সেখানে মেয়েদের কর্মমুখী করতে হবে। এনজিও সংস্থাগুলোকে বলবো, আপনারা মেয়েদের সেলাই–কাটিংসহ নানা দক্ষতা শেখান, যাতে তারা আয়–বর্ধনমূলক কাজে যুক্ত হতে পারে। শুধু মেয়েদের সচেতন করলেই হবে না—অভিভাবক ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও সচেতন করতে হবে।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ভগবতী রানী, ফ্রেন্ডশিপের টিম লিডার রুম্মানুল ফেরদৌস, জেনারেল ম্যানেজার একরামুল হক প্রমুখ।
সভায় বাল্যবিবাহ রোধে বিচার বিভাগ, আইনজীবী, স্থানীয় প্রশাসন ও উন্নয়ন কর্মীদের সমন্বিত পদক্ষেপের ওপর জোর দেওয়া হয়।



