অষ্টগ্রামে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে কৃষকের সেচ প্রকল্প দখলের অভিযোগ
কিশোরগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৩ পিএম
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত উজান কান্দা সেচ প্রকল্প জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কিম ম্যানেজার আনোয়ার মিয়া অষ্টগ্রাম থানায় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচ প্রকল্পের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত বিএনপি নেতা খালেক মিয়া পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের ১নং ওর্য়াডের বিএনপির সভাপতি।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত দুই বছর ধরে সরকারি অনুমোদন ও কৃষকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আনোয়ার মিয়া পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের উজান কান্দা সেচ প্রকল্পের স্কিম ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি মৌসুমেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভিত্তিতে উপজেলা সেচ কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে তাকে আবারও দায়িত্ব দেওয়া হয়। অনুমোদন পাওয়ার পর তিনি শ্রমিক নিয়োগ করে ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারকাজ শুরু করেন। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৯০ হাজার টাকা।
কিন্তু পূর্ব অষ্টগ্রাম (কবিরখান্দান) এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি খালেক মিয়া (৬৫) নেতৃত্বে বাচ্চু মিয়া (৫০), বাঁশি মিয়া (৩০), এলিম মিয়া (৩৫), জিয়াউল হক (৪৫), আবু মিয়া (৫৫), কাজিম উদ্দিন (৪৫), ফতু মিয়া (৫০), আক্কাছ মিয়া (৫৫), আঙ্গুর মিয়া (৫৫), হাফিজ মিয়া (৫৫), বাবু মিয়া (৪৫), হাকিম মিয়া (৫৫), মুন্না মিয়া (২৮)সহ আরও ১০–১৫ জন স্কিমটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। তারা শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেন এবং দা, লাঠি, লোহার রড ও বল্লমসহ দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেন। পরে বিএডিসি সেচ অফিসে ডেকে স্কিমটি জোর করে তাদের অনুকূলে লিখে দেওয়ার চাপও সৃষ্টি করেন।
ভুক্তভোগী আনোয়ার মিয়া অভিযোগ করে বলেন, “বিএনপির লোকজন এসে বলে—আমাদের নেতা ফজলুর রহমান বলে দিয়েছে, এই এলাকায় বিএনপি ছাড়া কেউ কিছু পাবে না। উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহমেদও তাদের সহায়তা করেছেন। ৭৪টি সেচ স্কিমের বেশির ভাগই বিএনপি নেতারা নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি অনুমোদন ও কৃষকদের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও আমি স্কিম চালু করতে পারছি না। থানায় গেলে বলে ইউএনও অফিসে যান, ইউএনও অফিসে গেলে বলে বিএডিসি অফিসে যান। এই অবস্থায় আমি এবং কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছি। দ্রুত সেচ স্কিম চালু না করতে পারলে বোরো আবাদে সমস্যা হবে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা খালেক মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গত বছর আমি ও আনোয়ার মিয়া একসঙ্গে স্কিমটি পরিচালনা করেছি। তাই এ বছরও যৌথভাবে করতে চাই। কিন্তু আনোয়ার একা করতে চাইছিল, তাই আমরা আমরা বলে দিয়েছি আমাদেরকে ছাড়া স্কিম পরিচালনা করতে দিব না। বিষয়টি উপজেলা বিএনপি সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহমেদ বলে দিয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহমেদ বলেন, “গত বছর যেহেতু দুজন মিলে স্কিম পরিচালনা করেছে, তাই সহকারী প্রকৌশলী বলেছেন—এ বছরও যেন তারা মিলেমিশে করে। আমিও একই কথা বলেছি। এর বাইরে কিছু জানি না।”
বিষয়টি জানতে চাইলে বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আছাদুল হক জানান, “ঘটনার কথা প্রথম আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমীন বলেন, “লিখিত অভিযোগের বিষয়ে এখনো আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”



