Logo
Logo
×

সারাদেশ

ইজারাবিহীন ২৩ বাঁশমহাল লুটেরাদের কবলে, মৌলভীবাজারে বিলুপ্তির পথে বাঁশবন

Icon

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩০ এএম

ইজারাবিহীন ২৩ বাঁশমহাল লুটেরাদের কবলে, মৌলভীবাজারে বিলুপ্তির পথে বাঁশবন

মৌলভীবাজারের একসময়ের সমৃদ্ধ ২৩টি বাঁশমহাল এখন কার্যত লুটেরাদের দখলে। চারটি রেঞ্জজুড়ে বিস্তৃত এসব বাঁশমহাল ইজারাবিহীন থাকায় বনের বাঁশ কেটে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। সরকারি অনুমোদন বা ইজারা না থাকলেও দপুর-রাত নির্বিচারে বাঁশ কাটার মহোৎসব চলছে, আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও সরকারি রাজস্ব—সবই।

বন বিভাগ একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ইজারাদাররা বলছেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে, তা বিক্রয়মূল্যের তুলনায় বেশি হওয়ায় লাভ তো দূরের কথা, লোকসান নিশ্চিত—এ কারণেই তারা আর ইজারা নিতে চান না। ফলে কোটি টাকার প্রাকৃতিক সম্পদ এখন উন্মুক্ত ও নিয়ন্ত্রণহীন।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার চার রেঞ্জে মোট ২৩টি বাঁশমহাল রয়েছে—রাজকান্দিতে ৭টি, জুড়ীতে ৭টি, বড়লেখায় ৪টি এবং কুলাউড়া রেঞ্জে ৫টি। প্রায় ৪০ হাজার একর বনভূমি এসব মহালের অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু ইজারা না থাকায় প্রতিটি মহালেই চলছে অবাধ লুট। রাজকান্দি রেঞ্জের লেওয়াছড়া, চম্পারায়, বাঘাছড়া, ডালুয়াছড়া, কুরমাছড়া, সোনারাইছড়া, সুনছড়া—সব জায়গাতেই দেখা গেছে কেটে নেওয়া বাঁশের গোড়া, ফাঁকা জায়গা আর পুড়িয়ে দেওয়া চিহ্ন। একই চিত্র জুড়ী, বড়লেখা ও কুলাউড়া রেঞ্জেও।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংঘবদ্ধ চক্র রাতে বা দিনের আলোতেই বনের বাঁশ কেটে ছড়ার পানিতে ভাসিয়ে পাচার করছে। বন বিভাগের পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় এই লুটপাট কেউ ঠেকাতে পারছে না।

স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, বাঁশ কেবল রাজস্বের উৎস নয়, এটি জীববৈচিত্র্য ও পাহাড়ি পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাঁশবন ধ্বংস হলে হুমকির মুখে পড়ে বন্যপ্রাণীর আবাস ও পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, ইজারা প্রথাই বন ধ্বংসের মূল কারণ। বাঁশকে রাজস্ব নয়, বনায়নের সম্পদ হিসেবে দেখতে হবে।

মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, গোপনে বাঁশ কেটে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনসম্পদ।

সিলেট বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ নাজমুল আলম জানান, ইজারা না হওয়ার পেছনে প্রশাসনিক ও আইনি কিছু জটিলতা রয়েছে। প্রতিটি মহালের বাঁশের পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য টিম মাঠে কাজ করছে। রিপোর্ট হাতে পেলে যেসব মহাল ইজারা দেওয়া সম্ভব হবে, সেখানে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই প্রাকৃতিক বাঁশবন পুরোপুরি উজাড় হয়ে যাবে, যা পুনরুদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন হবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন