চট্টগ্রাম বন্দরের দুই টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে, বিনিয়োগ ও স্বচ্ছতা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০৭ পিএম
চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে ডেনমার্ক ও সুইজারল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া—এক পক্ষ এটি সুযোগ হিসেবে দেখলেও আরেক পক্ষ নানা শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। প্রায় ৫৫ কোটি ডলার (৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগে পিপিপি মডেলে টার্মিনাল নির্মাণ করবে তারা, আর চুক্তি স্বাক্ষর সঙ্গেই বাংলাদেশ পেয়েছে ২৫০ কোটি টাকা ‘সাইনিং মানি’।
অন্যদিকে, সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএ পেয়েছে পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব। ২২ বছর মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি সেখানে ৪ কোটি ডলার (৪৯০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করবে। সাইনিং মানি হিসেবে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৮ কোটি টাকা।
চুক্তি দুটিকে স্বাগত জানিয়েছে একাংশ—তাদের মতে বিদেশি বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তি, গ্রিন পোর্ট নির্মাণ এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এ পদক্ষেপ সহায়ক হবে।
পূর্বের উদাহরণ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, যেটি সৌদি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের পরেও সাফল্য আসেনি।
সরকার চুক্তি নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখেনি; কী শর্ত, কোথায় লাভ—এসব কিছুই প্রকাশ করা হয়নি।
লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনাল ব্যবহারযোগ্য হতে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগবে।
অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে খরচ বাড়লে তার প্রভাব পড়বে ব্যবহারকারীর ওপর।
চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারে, তবে ব্যক্তিগত লাভের কোনো সুযোগ রাখা যাবে না। জনগণের সামনে বিনিয়োগের পূর্ণ রূপরেখা উপস্থাপন জরুরি।
শিপিং অ্যাজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক পরিচালক খায়রুল আলম সুজন চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শর্তাবলি স্পষ্ট নয়—চাকরি কারা পাবেন, চুক্তির মেয়াদ বাড়বে কি না, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী—এসব পরিষ্কার হওয়া দরকার ছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের বিভাগীয় সদস্য আনোয়ারুল আজিম রিংকু বলেন, লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনাল নিয়ে আপত্তি না থাকলেও লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশিদের দেওয়ার চেষ্টা নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েছে।
সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ইমাম মাহমুদ বিলু মনে করেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ভালো, তবে যন্ত্রপাতি অর্ডার থেকে বসানো পর্যন্ত দীর্ঘ সময় লাগে। তিনি মনে করেন, দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলো দেশের নিয়ন্ত্রণেই থাকা উচিত ছিল।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করতে রাজি হননি।



