টাঙ্গাইল-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন সেই নাসির
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এ ওবায়দুল হক নাসির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। গত ৩ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭টি আসনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে ঘাটাইলের মনোনয়ন নিয়ে উপজেলা বিএনপিতে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের দাবি, নাসির ঘাটাইলের স্থানীয় না হওয়ায় এবং অতীতের কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১২ জুলাই বিকেলে ঘাটাইল পৌর এলাকার উত্তরা এলাকাবাসীর আয়োজনে ঘাটাইল গণ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই মঞ্চের একটি ব্যানারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবির পাশে ওবায়দুল হক নাসিরের ছবি টাঙানো হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন ওবায়দুল হক নাসির। ওই মঞ্চে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শনের হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। জনপ্রিয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যও বিষয়টি নিয়ে নিজের ভেরিফাইড ইউটিউব ও ফেসবুক পেইজে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়।
ওবায়দুল হক নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বঞ্চিত করে কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে সংগঠনের কাঠামো তৈরি করেছেন ওবায়দুল হক নাসির। সম্প্রতি নারী কেলেঙ্কারির দায়ে তার দলের একজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক মেয়র মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, ‘এস এ ওবায়দুল হক নাসিরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে শফিউর রহমান মুক্তাকে পদায়ন। কারণ এই শফিউর রহমান মুক্তার ছেলে মাহমুদুর রহমান আলিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল শাখার নেতা এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘাটাইলে ছাত্রলীগের প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্বে ছিলেন।’
উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘গত বছর জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের সময় ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বক্তব্য দেওয়ার সময় আলিফ তাকে ঘনিষ্ঠভাবে সমর্থন করছেন। সেখানে ছাত্রলীগের সভাপতি শয়ন বলেন, ‘আমরা ফুঁ দিলে সমন্বয়করা ৫ মিনিটে উড়ে যাবে। তার পাশে কালো শার্ট পরা দাঁড়িয়ে থাকা আলিফকে ‘ঠিক’ ‘ঠিক’ বলে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সেই ভিডিও এখনও সোস্যাল মিডিয়ায় আছে। সেটি দেখলেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে।’
পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন ধলা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দল বাঁচাতে হলে এলাকার পরীক্ষিত নেতাদেরই মনোনয়ন দিতে হবে। বাইরে থেকে এনে প্রার্থী দিলে কর্মীরা তা মেনে নেবেন না। ওবায়দুল হক নাসির মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই ঘাটাইলে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কিছুতেই বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।’
পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, ‘ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিবারকে নেতৃত্বে নিয়ে আনা ওবায়দুল হক নাসিরের বিরুদ্ধে তৃণমূলে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করেছে। এ ঘটনায় ঘাটাইল বিএনপির ভবিষ্যৎ সাংগঠনিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, সেটি নিয়ে দলীয় কর্মীরা অনিশ্চয়তায় আছেন। কেন্দ্র যদি সিদ্ধান্তে অনড় থাকে তবে মাঠপর্যায়ে ক্ষোভ আরও তীব্রতর হবে। এর ফলে সামনের জাতীয় নির্বাচনে ঘাটাইলে প্রচার-প্রচারণায় নিশ্চিত বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘ঘাটাইল আসনে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করা অনেক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে যাকে ঘাটাইল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি অন্য একটি উপজেলার বাসিন্দা। তার বাড়ি বাসাইল উপজেলায়। তাই আসনটিতে তিনি বহিরাগত হিসেবেই সকলের কাছে গণ্য। আমরা যারা বছরের পর বছর ধরে মাঠে আছি, আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি, আমাদের মতামত না নিয়ে বাইরের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তৃণমূল তা কিছুতেই মেনে নেবে না।’
অভিযোগের বিষয়ে এস এ ওবায়দুল হক নাসিরের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা। প্রতিপক্ষ আমাকে ঘায়েল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এসবের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’



