রূপগঞ্জে ঘুষ ছাড়া মেলে না ভবন নির্মাণের অনুমতি
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম
ছবি : যুগেরচিন্তা
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ড্যাপের নাম মাত্র অনুমোধনে যত্রতত্র বহুতল ভবন নির্মাণ করায় একদিকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে মানুষজনের চলার পথ সংকোচিত হচ্ছে। আর এসব ভবন যে কোন সময় ধসে পড়ে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার তারাব পৌরসভায় গত দেড় যুগে ড্যাপের নাম মাত্র অনুমোধন ব্যবহার করে ২ হাজারের অধিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আর প্রতিটি ভবন নির্মাণে তারাবো পৌরসভার ইঞ্জিনয়িার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সার্ভেয়ার মাকসুদুর রহমান, নক্সাকার মোহাম্মদ সাদেক সহ সংশ্লিষ্টদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। যারা চাহিদা মোতাবেক ঘুষ দেন কেবল তারাই নাম মাত্র অনুমোদন নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে পারেন। আর যারা সরকার নির্ধারীত টাকার বাহিরে বাড়তি টাকা দিতে চাননা তারা অনুমোদনের অপেক্ষায় ঘুরছেন বছরের পর বছর। এসবের প্রতিকার চেয়ে সম্প্রতি ভুক্তভোগীদের গণস্বাক্ষরিত ১২ পৃষ্টার একটি অভিযাগপত্র নারায়ণগঞ্জ দুদক কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ও পৌরসভা কার্যালয় সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগপত্র জমা দেন স্থাণীয় সচেতন মহল। প্রতিকারের আশায় তীর্থের কাকের মত পথ চেয়ে আছেন তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিগত আওয়ামীলীগ শাসনামলের ১ যুগে তারাব পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শুধু পৌরসভার ইঞ্জিনয়িার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সার্ভেয়ার মাকসুদুর রহমান, নক্সাকার মোহাম্মদ সাদেককে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে ২ হাজারের অধিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দেখেও যেনো দেখেননা দায়িত্বশীলরা। রাজউকের এড়িয়ায় বা ড্যাপের আওতাধীন এলাকায় ভবন নির্মাণ করতে গেলে আইবি/আইএবি/রাজউকের অনুমোধিত ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে প্লান পাশ করাতে হয়। অথচ চাহিদা মাফিক টাকা পেলে সরেজমিন পরিদর্শণ ছাড়াই অফিসে বসে পৌরসভারে এসব কর্মকর্তারাই ভবনের প্লান পাশ করে দেন। তা দিয়েই চলে ভবন নির্মানের হিরিক। অথচ রাজউক এড়িয়ায় ৪টি বিষয়ের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। ১. আর্কিটাকচারাল প্লান, ২. স্ট্রাকচারাল প্লান, ৩. প্লাম্পিং প্লান, ৪. ইলেকট্রিকেল প্লান। কিন্তু চাহিদা মাফিক ঘুষের টাকা পেলে আর কোন কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না। এতে অপরিকল্পিত এসব ভবন যে কোন সময় ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরণের দূর্ঘটনা এমন দাবি স্থানীয়দের।
ভুক্তভোগী সেলিম মাহমুদ জানান, তার ভবনের প্লান পাশ করাতে গিয়ে দিতে হয়েছে মোটা অংকের টাকা। তারপর সয়েল টেস্ট করাতে গিয়ে বাহিরের থেকে ৫ হাজার টাকায় করান। কিন্তু পৌরসভার এ কর্মকর্তারা তা মানেন না। তাই ১০ হাজার টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে সয়েল টেষ্ট করাতে হয় তার।
তারাব এলাকার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে ভবনের ড্রইয়িং ডিজাইন আমি নিজেই করি। তখন তাদের কাছে জমা দিলে তারা তা গ্রহণ করেনি। ববং তার জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। বাধ্য হয়ে যখন আমি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেই তখন তারা আমার ড্রইয়িং ও ডিজাইন পাশ করে দেয়। তাছাড়া তারাব পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কোন প্রকার অনুমোতি ছাড়াই তিন তলা বাড়ি নির্মাণ করেন। যার পাশে দিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক নেয়া হয়েছে। এসব হাই ভোল্টেজের তারের পাশে ভবন নির্মাণ করার কোন প্রকার নিয়ম নেই। সব মিলিয়ে টাকা দিলে অনিয়মই এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে।
তারাব এলাকার আয়েত আলী বলেন, ২০২১ সালে আমি ১১২৫ স্কয়ার ফুট ৪ তলা ভবন নির্মাণের প্লানের জন্য আবেদন করি । তখন তারা প্লান পাশ করতে চায় না। আমাকে বিভিন্ন ভাবে ঘুরাতে থাকে। তখন তারা আমার কাছে ৮০ হাজার টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে তাদের দাবিকৃত টাকা দিলে আমার ভবন নির্মাণের অনুমোতি দেয়।
এমন নানা অভিযোগ পৌরসভার এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে থাকলেও বছরের পর বছর তারা রয়েছে বহাল তবিয়তে। এসব যেনো দেখার কেউ নেই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাইদুল ইসলাম মিঞা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন কিছু ঘটে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



