ঠিকাদারি জটিলতায় ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ, পাঁচ বছর ধরে টিনের ঘরে পাঠদান
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ পিএম
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভবনের প্রতিশ্রুতি মিলেছিল পাঁচ বছর আগে। কিন্তু এখনো সেই ভবন বাস্তবায়ন হয়নি। পুরোনো ভবন ভেঙে দেওয়ার পর থেকে ১৪৭ শিক্ষার্থী ও ৬ শিক্ষক আধা কিলোমিটার দূরের এক টিনশেড ঘরে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন—রোদ, বৃষ্টি আর ঝড় উপেক্ষা করে।
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গেলে দেখা যায়, অসমাপ্ত ভবনের পাইলিংয়ের লোহার দণ্ডে মরিচা পড়েছে, পানি জমে আছে পিলারের গোড়ায়। চারপাশে ছড়িয়ে আছে নষ্ট হয়ে যাওয়া নির্মাণসামগ্রী। পুরোনো ভবনের কেবল একটি কক্ষ—‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কক্ষ’—এখনো টিকে আছে, বাকি সব ভেঙে ফেলা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের সংকটে শিক্ষার্থীদের চার-পাঁচজনকে বসতে হয় একটি বেঞ্চে, নিয়মিত অ্যাসেম্বলিও হয় সড়কের পাশে বা ক্লাসরুমের ভেতরেই।
অভিভাবক মোহাম্মদ ইদ্রিছ বলেন, বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘরগুলো এতটাই গরম যে শিশুরা ক্লাস করতে চায় না। পুরোনো ভবনটাই বরং ভালো ছিল। শিক্ষার্থী ফাতেমা জোহরা ও ইমরান হোসাইন জানায়, গরমে টিনের নিচে বসা যায় না, শরীর পুড়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে কাজ বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘদিন। ফলে পাইলিং করা লোহা ও অন্যান্য সামগ্রী চুরি হয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এমডিএফপি প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন এক বছর পরই কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে কাজ আর এগোয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাব বেগম বলেন, ভবন না থাকায় পড়াশোনায় বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। আগে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল, এখন ১৪৭ জনে নেমে এসেছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস বন্ধ আছে, দামি জিনিসও রাখা যায় না চুরির ভয়ে।
স্থানীয় যুবক আমিনুল হক ও সাকিব বলেন, পাঁচ বছর আগে পাইলিং হয়েছিল, সবাই ভেবেছিল ভবন দ্রুত হবে। কিন্তু এক বছর পরই কাজ থেমে যায়। এখন লোহা-সামগ্রী সব নষ্ট হচ্ছে।
আনোয়ারা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সানাউল্লাহ কাউছার বলেন, কাজ বন্ধ থাকায় শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অস্থায়ী কক্ষ নির্মাণের জন্য সহায়তা চেয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী জানান, ঠিকাদারের অবহেলার কারণে পুরোনো প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। বি-স্ট্রিম প্রকল্পের আওতায় নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, বিদ্যালয় ভবনের জন্য নতুন বরাদ্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
পাঁচ বছর ধরে অস্থায়ী টিনশেড ঘরে চলছে দক্ষিণ তৈলারদ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। ৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ভবন নির্মাণ শুরু হলেও ঠিকাদারি জটিলতায় কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না।



