চট্টগ্রাম বন্দরে নিলাম কনটেইনারের জট বাড়ছেই
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫০ এএম
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে নিলামযোগ্য কনটেইনার কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। নিয়মিত নিলাম ও ধ্বংস কার্যক্রম চলমান থাকলেও উল্টো বেড়েই চলছে নিষ্পত্তিযোগ্য কনটেইনারের সংখ্যা। ফলে এটি এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য এক নিয়মিত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল রবিবার পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে জমা থাকা কনটেইনারের ২৫ শতাংশই নিলামযোগ্য, যা বন্দরের মোট ধারণক্ষমতার প্রায় ২০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে, বাড়ছে জট।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বন্দরে ৪২ হাজার ১৮৪ টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের) কনটেইনার মজুত আছে, যার মধ্যে ১০ হাজার ৩৩৪ টিইইউএস কনটেইনার নিলামযোগ্য। এসব কনটেইনারে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য আটকে আছে। সময়মতো নিলাম সম্পন্ন হলে সরকারের রাজস্ব আয় হতো ওই টাকার সমপরিমাণ।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, নিলামযোগ্য কনটেইনারের কারণে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বকেয়া ভাড়া আটকে আছে বন্দরের। সময়মতো এগুলো সরানো গেলে ইয়ার্ডের জায়গা খালি হয়ে নতুন কনটেইনার গ্রহণ সহজ হতো।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ এনামুল করিম বলেন, বর্তমানে ১০ হাজার ৩৩৪ টিইইউএস নিলামযোগ্য কনটেইনার পড়ে আছে। আমরা কাস্টম হাউসকে বারবার নিলাম দ্রুত সম্পন্নের অনুরোধ জানাচ্ছি, কিন্তু কোনো কার্যকর অগ্রগতি হচ্ছে না। নিলামের ধীরগতি এখন বন্দরের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের বিডার মোহাম্মদ ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, নিলাম দ্রুত হলে সরকার রাজস্ব পায়, আমরাও লাভবান হই। কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেক পচনশীল পণ্য যেমন আপেল, কমলা, আদা, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি নষ্ট হয়ে যায়। শত শত কনটেইনার এমনভাবে পড়ে আছে।
কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার (নিলাম) মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ জানান, যেকোনো পণ্য চালান বন্দরে আসার পর ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না হলে তা নিলামযোগ্য হিসেবে গণ্য হয়। অনেক আমদানিকারক সময় বাড়িয়ে নেন, কেউ মামলা করেন—ফলে নিলাম বিলম্বিত হয়।
তিনি আরও জানান, আগামী সপ্তাহে ১৫০টি কনটেইনারে প্রায় ২৫০ টিইইউএস পণ্য নিলামে তোলা হবে, যার মধ্যে কাপড়, সুতা, মেশিনারি ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ রয়েছে। পাশাপাশি ১৯টি বিপজ্জনক কনটেইনার (৩০ টিইইউএস) ধ্বংস করা হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ২০ বছর পুরোনো কনটেইনারও এখনো বন্দরে পড়ে আছে। সেগুলো দ্রুত শনাক্ত করে নিষ্পত্তি করা জরুরি।
বাংলাদেশ শিপিং অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ছৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ১০ হাজারের বেশি নিলাম কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ড দখল করে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্বের কোথাও বন্দরে এভাবে কনটেইনার জমে থাকে না। কাস্টমসের উচিত দ্রুত নিলাম করা অথবা ধ্বংস করা। একই সঙ্গে বেসরকারি ডিপো ব্যবহারের পরিধি বাড়াতে হবে, তাহলে বন্দরের চাপ অনেকটা কমে যাবে।



