ক্যাথল্যাব মেশিন সরানোর পেছনে বড় চক্র সক্রিয়!
স্টাফ রিপোর্টার :
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজে অনিয়ম, জনবল সংকট ও গোপন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন।
সিরাজগঞ্জ শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চলছে ভয়াবহ অনিয়ম, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও গোপন ষড়যন্ত্র—এমন অভিযোগে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ। হাসপাতালের নাম পরিবর্তন, বছরের পর বছর শূন্যপদে নিয়োগ না দেওয়া, নতুন পদ সৃষ্টিতে টালবাহানা এবং ২০০ কোটি টাকার ক্যাথ-ল্যাব মেশিন ঢাকায় সরিয়ে নেওয়ার পেছনে একটি অসাধু প্রভাবশালী মহলের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১১টায় শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সিরাজগঞ্জ জেলা স্বার্থরক্ষা ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধনে চিকিৎসক, সমাজকর্মী, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। নেতৃত্ব দেন সংগঠনের আহবায়ক ডা. এম এ লতিফ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সিরাজগঞ্জ বাংলাদেশের অন্যতম নদীভাঙ্গন কবলিত জেলা। এখানকার দরিদ্র জনগণ প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারে না—সরকারি হাসপাতালই তাদের একমাত্র ভরসা। অথচ বিশাল অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালের অসংখ্য পদ বছরের পর বছর খালি পড়ে আছে। জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, হার্টের রোগীদের জন্য স্থাপন করা অত্যাধুনিক ক্যাথ-ল্যাব মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ সেটি এখন ঢাকায় সরিয়ে নেওয়ার গোপন চক্রান্ত শুরু হয়েছে, যা সিরাজগঞ্জবাসীর জীবন নিয়ে নির্মম তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান। তিনি বলেন, “একটি সরকারি হাসপাতালের সম্পদ সরিয়ে নেওয়া মানে জনগণের জীবন নিয়ে খেলা করা। যারা এই ষড়যন্ত্র করছে, তারা শুধু প্রশাসনিক নয়—রাজনৈতিক ছত্রছায়াতেও নিরাপদে আছে। এই চক্রকে এখনই থামাতে না পারলে সিরাজগঞ্জবাসীর স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংস হয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার যদি সত্যিই জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চায়, তবে এই হাসপাতালের শূন্যপদ পূরণ, নতুন পদ সৃষ্টি ও ক্যাথ-ল্যাব মেশিন চালু করা ছাড়া বিকল্প নেই। আমরা চাই না—রাজনীতি বা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে এই জেলার মানুষের চিকিৎসা বঞ্চনা চলতে থাকুক।”
ফোরামের পক্ষ থেকে চারদফা দাবি জানানো হয়,
* শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাম অবিলম্বে পরিবর্তন করা;
* সব শূন্যপদ দ্রুত পূরণ করা;
* জরুরি, বহির্বিভাগ ও মেডিসিন বিভাগে নতুন পদ সৃষ্টি ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করা;
* ক্যাথ-ল্যাব মেশিন স্থানান্তরের ষড়যন্ত্র বন্ধ করে বিভাগটি অবিলম্বে চালু করা।
আহবায়ক ডা. এম এ লতিফ বলেন, “এ হাসপাতাল ধ্বংস করতে একটি প্রশাসনিক-রাজনৈতিক চক্র সক্রিয়। জনগণের সম্পদ রক্ষা ও চিকিৎসা সেবা সচল রাখতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ জরুরি।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় সিরাজগঞ্জের এই সরকারি মেডিক্যাল কলেজটি এখন জনবল সংকট, গাফিলতি ও স্বার্থান্বেষী চক্রের কবলে পড়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এ হাসপাতালটি উত্তরাঞ্চলের জন্য এক ‘নীরব মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করেছেন তারা।



