২২ দিন পর নদীতে নামতে প্রস্তুত চাঁদপুরের অর্ধলক্ষ জেলে
চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৩ এএম
জীবনের চাকা আবার ঘুরবে সেই আশায় ২২ দিন পর নদীতে নামার অপেক্ষায় চাঁদপুরের অর্ধলক্ষাধিক জেলে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশে ভরবে জেলের জাল, ফিরবে তাদের মুখের হাসি—এমনই প্রত্যাশা নদীপাড়ের মানুষদের।
ইলিশের প্রজনন নিরাপদ রাখতে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর মতো চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাতেও গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছিল ২২ দিনের ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞা। এ সময়ে নদীতে মাছ ধরা, বিক্রি, পরিবহন ও মজুত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাত পেরোতেই এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে, আর সেই মুহূর্তের প্রতীক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা।
শেষ সময়ে কেউ নৌকা মেরামত করছেন, কেউবা পুরোনো জাল সেলাই করে নিচ্ছেন নতুন করে। মুখে হাসি থাকলেও মনে দুশ্চিন্তা—কারণ এবছর ভরা মৌসুমেও নদীতে আশানুরূপ ইলিশের দেখা মেলেনি। মৌসুম প্রায় শেষের দিকে, তাই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা তাদের।
চাঁদপুর জেলায় নিবন্ধিত ৪৫ হাজার ৬১৫ জেলে পরিবারকে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলেদের মতে, এই সহায়তা তাদের কাছে অপ্রতুল। ওই সময় জীবিকা হারিয়ে চরম কষ্টে পড়েন জেলেরা।
চাঁদপুর সদরের আনন্দ বাজার এলাকায় মেঘনা পাড়ের জেলে মজিব দেওয়ান বলেন, ‘সরকার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিসে, আমরা পালন করেছি। কিন্তু কিছু অসাধু জেলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে ইলিশ শিকার করেছে। যার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ইলিশের প্রজনন সময়। আমরা এখন একবুক আশা নিয়ে নদীতে নামার অপেক্ষা করছি। আল্লাহ কবুল করলে নদীতে ইলিশ পাবো, না হলে ঋণের বোঝা বাড়বে।’
চাঁদপুর সদরের সফরমালী এলাকার জেলে জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা শেষ মুহূর্তে জাল সেলাই ও নৌকা মেরামত করছি। নৌকা নদীর কাছে নিয়ে এসেছি, এখন নদীতে শুধু মাছ ধরবো। আমরা ইলিশের পাশাপাশি নদীর অন্য মাছও ধরি। তবে নদীতে মাছ আছে কিনা বুঝতে পারছি না। না থাকলে সংসার চালাবো কী করে?’
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এই বছর পদ্মা-মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় কঠোর অভিযান পরিচালনা হয়েছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, যাতে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারে। এ বছর চারশোর মতো অভিযান চালিয়েছি। যারা আইন অমান্য করেছে তাদের জেল জরিমানা করেছি। নিষেধাজ্ঞার সময়ে প্রত্যেক জেলেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করার চেষ্টা করেছি, যাতে মাছ না ধরে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানটি সফল হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও চাঁদপুরে সেই তুলনায় তেমন ঘটনা ঘটেনি। এই বছর মা ইলিশ ডিম যেভাবে ছেড়েছে, ডিমগুলো জাটকা থেকে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারলে ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে বলে জানান তিনি।



