সন্ধ্যা নামলেই ছাতিম ফুলের সুবাসে মাতোয়ারা ব্রাহ্মণপাড়া
ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৩ এএম
ফুলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরন্তন। ফুল শুধু প্রকৃতিকেই সাজায় না, এর ঘ্রাণও মানুষকে মুগ্ধ করে। এমনই এক ঘ্রাণময় ফুল হলো ছাতিম, যার মাদকতাময় সুবাসে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতি এখন যেন রূপকথার মতো মোহনীয়। সন্ধ্যা নামলেই চারপাশ ভরে ওঠে ছাতিম ফুলের তীব্র, মিষ্টি ঘ্রাণে—মন জুড়িয়ে যায় পথচারী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণপাড়া-মিরপুর সড়কের দুই পাশে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও বাড়িঘরের আশপাশে ফুটে আছে ছাতিম ফুল। সন্ধ্যা নামলেই বাতাসে ভেসে আসে এর মোহময় সুবাস। গাছের নিচে ছড়িয়ে থাকা ঝরা ফুল পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যেন নীরব সৌন্দর্যের উৎসব।
স্থানীয় বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, ব্রাহ্মণপাড়া থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে যত ছাতিমগাছ দেখি, সন্ধ্যা হলেই এর ঘ্রাণে মন ভরে যায়। আগে এসব গাছ অনেক ছিল, এখন আর তেমন দেখা যায় না। আরেক বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, গ্রামেগঞ্জে আগে অসংখ্য ছাতিমগাছ ছিল। এখন হাতে গোনা কয়েকটি আছে। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটা গাছ আছে—সন্ধ্যা হলেই আশপাশে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান তাবাসসুম বলেন, ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ মন ছুঁয়ে যায়। রাত যত বাড়ে, এর ঘ্রাণ ততই তীব্র হয়। প্রতিবছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করি।
শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ মানুষকে বিমোহিত করে। গাছের উচ্চতা বেশি হওয়ায় ফুল চোখে না পড়লেও এর ঘ্রাণেই বোঝা যায়—গাছজুড়ে ফুল ফুটেছে।
ইউনানি চিকিৎসকদের মতে, ছাতিম ফুলের সৌন্দর্যের পাশাপাশি এর রয়েছে নানা **ঔষধি গুণ**। এই গাছের ছাল, পাতা ও কষ ব্যবহার করা হয় জ্বর উপশম, দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়, পাতলা পায়খানা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং চর্মরোগ নিরাময়ে। ছালের ক্বাথ ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েডের চিকিৎসাতেও কার্যকর।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক সোহেল রানা বলেন, ছাতিম ফুলের গন্ধ অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর কোথাও গাছ দেখা না গেলেও এর সুবাসই জানিয়ে দেয়, আশপাশে ছাতিম ফুটেছে। দুঃখের বিষয়, গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এর ঘ্রাণ ও ঔষধি ব্যবহার দুটোই কমে যাচ্ছে।
বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালস্টনিয়া স্কলাররিস (Alstonia scholaris)। এটি অ্যাপোসাইনেসি পরিবারের বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক বৃক্ষ। ইংরেজিতে পরিচিত ডেভিলস ট্রি বা ব্ল্যাকবোর্ড ট্রি নামে। বাংলায় বলা হয়—ছাতিম, ছাতিয়ান বা ছাতইন। এর আদিনিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। সাধারণত ২০ থেকে ৪০ মিটার উঁচু এই গাছের ছাল ধূসর, সাতটি পাতা একসঙ্গে গুচ্ছাকারে থাকে, আর ফুল হালকা ঘিয়ে রঙের। কাঠ ব্যবহার হয় ব্ল্যাকবোর্ড, পেনসিল ও কফিন তৈরিতে। পাশাপাশি এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একসময় ব্রাহ্মণপাড়ার সর্বত্র ভেসে বেড়াত ছাতিম ফুলের সুবাস। এখন তা সীমিত হলেও, সন্ধ্যা নামলেই বাতাসে ভেসে আসে সেই চিরচেনা গন্ধ—যা এখনো মুগ্ধ করে মানুষ ও প্রকৃতিকে।



