চট্টগ্রাম বন্দরে ৫৬ সেবায় মাশুল বাড়ল ৪১ শতাংশ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৮ এএম
আমদানি-রপ্তানি মিলে ৫৬ ধরনের সেবায় মাশুল বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারি গেজেট প্রকাশের এক মাস পর, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে নতুন মাশুল কার্যকর হয়েছে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাশুল বৃদ্ধির ফলে আমদানি-রপ্তানি ব্যয় বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে পণ্যের বাজারদরে। এতে শেষ পর্যন্ত ভোক্তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
নতুন ট্যারিফ অনুযায়ী, ৫৬টি সেবার বিপরীতে গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু সেবায়—বিশেষ করে টাগবোট সার্ভিস ও পাইলট চার্জে—বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ থেকে চারগুণ পর্যন্ত।
পণ্যভর্তি ২০ ফুট একক কনটেইনার (TEUs) প্রতি মাশুল এখন ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা, যা আগে ছিল ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। কনটেইনার ওঠানো-নামানোর চার্জ ৪৩.৪০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৬৮ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক প্রতিষ্ঠান। লাভের মধ্যেও আবার গড়ে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই। প্রয়োজনে ধাপে ধাপে বাড়ানো যেত।
বাপা সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক বলেন, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পে এই বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে। খরচ বাড়লে বায়াররা অন্য দেশে চলে যেতে পারেন। এতে কর্মসংস্থান ও রপ্তানি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিজিএমইএ চট্টগ্রামের পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী মনে করেন, বর্ধিত মাশুলে আরএমজি খাত নতুন চ্যালেঞ্জে পড়বে। এখনই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্র। মাশুল বাড়লে ইউরোপের বায়াররা ভারত বা অন্য দেশে ঝুঁকবে, এতে আমাদের রপ্তানি ও কর্মসংস্থান হুমকিতে পড়বে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল কবীর সুজন বলেন, ট্যারিফ বাড়ায় কনটেইনার ও জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। এতে আমদানি খরচ বাড়বে, ফলে পরিবাহিত পণ্যের দামও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছিলাম—মাশুল যদি বাড়াতেই হয়, ১০–১৫ শতাংশের বেশি যেন না বাড়ানো হয়। এখন ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত খরচ ভোক্তার কাছ থেকেই তুলবেন।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল আগামী ডিসেম্বরে বিদেশি অপারেটরদের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা আছে। তাদের সুবিধা নিশ্চিত করতেই মাশুল বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম বন্দরের এ মাশুল সমন্বয় এখন ব্যবসায়ী মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি সেবার মান উন্নয়নের অংশ; তবে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এ বৃদ্ধি অর্থনীতির সব খাতেই ব্যয়চাপ বাড়াবে।



