পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত মেয়ে তার প্রাপ্য অধিকার চায়
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
যুগের চিন্তা
কক্সবাজারে মহেশখালীর কালারমারছড়ায় ‘ভগ্নিপতির যোগসাজশে’ মা সহ অপর ভাই-বোনকে প্ররোচিত করে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে এক সন্তানকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলনে অন্যায়ভাবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের নোনাছড়ি এলাকার মৃত মোহাম্মদ জকরিয়ার বড় মেয়ে এস্তেহাদুন্নেছা রিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে এস্তেহাদুন্নেছা রিয়া বলেন, মহেশখালীর ধলঘাটা, কালারমারছড়া ও হোয়ানক অমাবশ্যাখালী মৌজায় তার বাবা মোহাম্মদ জকরিয়ার মালিকাধীন খতিয়ানভূক্ত কিছু পরিমান জমি রয়েছে। এর মধ্যে বিগত ২০০২ সালে জনৈক কবির মিয়ার কাছ থেকে কালারমারছড়া মৌজাভূক্ত সাড়ে ২৬ শতক জমি তার বাবা দলিলমূলে ক্রয় করেন। গত ২০১৪ সালে এক ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তানকে নাবালক অবস্থায় রেখে মোহাম্মদ জকরিয়া মারা যান।
সন্তানরা নাবালক থাকায় জকরিয়ার মালিকানাধীন ওইসব জমি দেখভালের জন্য গত ২০২০ সালে স্ত্রী সেলিনা আক্তার কক্সবাজারে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই সময় বড় মেয়ে এস্তেহাদুল রিয়া সাবালক হওয়ায় অন্য ভাই-বোনের উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানাধীন জমি দেখভালের জন্য সেলিনা আক্তারকে ক্ষমতা ( আমমোক্তারনামা ) প্রদান করে আদালত আদেশ দেন।
সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, মহেশখালীতে তিনটি মৌজায় তার বাবার মালিকাধীন কিছু জমি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অধিগ্রহণ করা হয়। গত ২০২০ সালে তার মা সেলিনা আক্তার ওই অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ পেতে আদালতের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় আবেদন করে। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে আলাদা আলাদা বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে এই পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশী অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, সেলিনা আক্তার জমি অধিগ্রহণ বাবদ মঞ্জুরিকৃত টাকা উত্তোলন করতে গেলে জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখা হতে সাবালিকা মেয়ে এস্তেহাদুলন্নেছা রিয়ার পাপ্য অংশের টাকাও এক সাথে গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু ছোট বোন মাশকা খানম দিশা’র স্বামী গোলাম নুসরাতের যোগসাজশে ৩ শত টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে রিয়ার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সম্মতিপত্র ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় প্রদান করে। ওই সম্মতিপত্রের আলোকেই রিয়ার পাপ্য অংশ সহ মা সেলিনা আক্তার অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করেন। যা এস্তেহাদুলন্নেছা রিয়া অবহিত ছিলেন না।
এদিকে রিয়ার সন্তানসহ পরিবারের ব্যয় নির্বাহের টানাপোড়নে ভুগছিলেন স্বামী মোহাম্মদ আনিছ। এই পরিস্থিতিতে ছোট সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় রিয়া তার মায়ের আর্থিক সহায়তা চান। কিন্তু মা টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে আর সহায়তা করেননি। তবে কয়েকদিন পর ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ একটি চেকের টাকা উত্তোলন করে রিয়া’কে প্রদানের কথা জানান। এসময় রিয়াকে তার মা জানায়, আদালত প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চেকটি রিয়ার নামে ইস্যু করা। চেকটির টাকা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে সে গ্রহণ করতে পারে।
কিন্তু চেকের অনুকূলে বরাদ্ধ টাকা গ্রহণ করতে গেলে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সংশ্লিষ্টরা জানায়- ওই টাকা রিয়ার বাবাকে যিনি জমি বিক্রি করেছিলেন; তার উত্তরাধিকারিরা আংশিক টাকা উত্তোলন করে আগেই নিয়ে যায়। এতে মায়ের প্রতিশ্রুতি মতে রিয়ার তার অংশের টাকা বুঝে পাননি। এ নিয়ে রিয়া তার পৈত্রিক সম্পত্তি ও ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
এব্যাপারে মা ও অন্য ভাই-বোনকে অবহিত করলে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ একটি চেকের টাকা উত্তোলন করে উল্টো রিয়া’র বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে ভগ্নিপতি গোলাম নুসরাত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে রিয়ার স্বামী মোহাম্মদ আনিছ ও ভাসুর মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয় গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে খবর প্রচার করেছে। যা মানহানিকর।
ভূক্তভোগী এস্তেহাদুলন্নেছা রিয়া পৈত্রিক সম্পত্তি ও ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রাপ্য টাকা ফেরত চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।



