Logo
Logo
×

সারাদেশ

বাবা প্রবাসে, ৪ বছরের শিশুর মৃত্যু, দাফনে বাধা

Icon

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম

বাবা প্রবাসে, ৪ বছরের শিশুর মৃত্যু, দাফনে বাধা

ছবি- যুগের চিন্তা

চার বছরের এক শিশুর দাফন নিয়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা। মৃত শিশুর প্রবাসী বাবার অনুপস্থিতিতে তার দাফনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার চাচাতো চাচাদের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, পারিবারিক কবরস্থানে শিশুটির দাফন হতে দেবে না।

শিশু ফাহাদের হঠাৎ হার্টের সমস্যা থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। রবিবার (১২ অক্টোবর) সকালে শিশুটির হার্টের অপারেশন হলেও শেষ পর্যন্ত শিশুটির মৃত্যু হয়। এরপর শিশুটির দাফন কার্য নিয়ে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা।

মৃত শিশু মো. ফাহাদ মিয়া পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের গাংকুল পাড়া এলাকায় প্রবাসী আল মামুন বাবুল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে শিশুটির বাবা সৌদি আরবে একটি কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করেন। তার আপন ভাই বাচ্চু মিয়াও প্রবাসী।

জানা যায়, পারিবারিক কবরস্থানে শিশুটির দাদা রিয়াজ উদ্দিন ও দাদি আমেনা খাতুনের কবর রয়েছে। বাবুল মিয়ার ইচ্ছে তার বাবা-মায়ের পাশেই শায়িত করা হোক তার ছেলেকে। কিন্তু পারিবারিক কবরস্থানের জমিটি মৃত রিয়াজ উদ্দিন ও তার ভাই মৃত মাইজ উদ্দীনের এজমালি জমি হওয়ায় কবর দিতে বাধা দেন বাবুল মিয়ার চাচাতো ভাইয়েরা। তার চাচা মৃত মাইজ উদ্দীনের ছেলে সোহেল মিয়ার দাবি, এই কবরস্থানে আর দাফন করা হবে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রবাসী বাবা আল মামুন বাবুল মিয়া ভিডিও কলে ছেলের নিথর মুখ দেখে চোখের পানি ফেলছেন আর বলছেন, ‘আমার ছেলে টাকে আমার বাবা-মায়ের কবরের পাশে শুইয়ে দাও ও আমার জান। কিন্তু প্রবাসে থাকা সোহেল মিয়া ফোনে বাড়িতে থাকা তার ছোট ভাই আসিফকে নির্দেশ দিয়ে ওই কবরস্থানে কবর দিতে বাধা দেয়। তাদের ভাষ্য, ওই পারিবারিক জমিতে কবর দেওয়া যাবে না। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে ঘটনাস্থলে যান পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ। তবে তারাও বুঝাতে ব্যর্থ হওয়ায় পরে স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিকল্প স্থানে শিশুটিকে দাফন করা হয়।

স্থানীয়রা জানায়, শিশু ফাহাদের পরিবার যেখানে কবর দিতে চাচ্ছে সেখানে আগে থেকেই তার দাদা-দাদি কবর রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এটা পারিবারিক কবর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে জমিটি রাস্তার পাশে হওয়ায় বর্তমানে এর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য এখানে কবর দিতে বাধা দিচ্ছে শিশুটির চাচাতো চাচারা।

স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা বুঝিয়ে বলেছি- এটা তো একটা শিশু। বাচ্চাটার বাবা বিদেশ থেকে বলেছে তার বাবা-মায়ের পাশে দাফন করার জন্য। কিন্তু তার চাচাতো ভাইয়েরা শোনেনি। শিশুটির দাদার জায়গা এটা। তারপরও তারা এখানে আর নতুন কোনো কবর দিতে দেবে না। বলছে যার যার জায়গায় কবর দেওয়ার জন্য।

প্রবাসী বাবুল মিয়ার বন্ধু রায়হান আকন্দ বলেন, আজকে সকালে খবর পাই আমার বন্ধুর ছেলে মারা গেছে। সে প্রবাস থেকে আমাকে ফোন দিয়ে বলছে, দাফন নিয়ে বিরোধ হচ্ছে। আমি এখানে এসে যা দেখি প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। আসলে মানবিক দিক থেকে পারিবারিক স্থানে কবর দেওয়া উচিত ছিল। এখন মৃত শিশু ফাহাদের বাবার ক্রয় করা জমিতে দাফন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরেক চাচাতো ভাই হাকিম বলেন, বর্তমান জায়গাটা এজমালি (যৌথ) জায়গা। দাদু এখানে ছয় গন্ডা জায়গা পাবে। এখানে আমরা সবাই অংশ পাই। কিন্তু এখন তাদের দখলে এইজন্য তারা বাঁধা দিয়েছে। এখানে কবর দেওয়ার জন্য বাপ-চাচা ও এলাকার অনেকেই তাদের রিকোয়েস্ট করেছে কিন্তু তারা দেয়নি। বলে মার্ডার হবে তবুও এখানে কবর দিতে দেবে না। বাধ্য হয়ে অন্য জায়গায় দাফন দিচ্ছি।

মৃত ফাহাদের ফুফু পারুল আক্তার বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। আমার দুই ভাই প্রবাসে। বাড়িতে আমাদের কেউ নেই। আমার ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে ওর দাদা-দাদির সঙ্গে কবর দেওয়ার জন্য। কিন্তু দিতে দিল না। মাসুম বাচ্চার কবর দিতে কতটুকু জায়গা লাগতো?

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সোহেল মিয়ার ছোট ভাই আসিফ বলেন, আমার বড় ভাই (সোহেল) বলেছে এখানে কবর দেওয়া যাবে নাসে জানে কিসের জন্য বাধা দিতে বলেছেহয়তো জায়গা পাবেএটা এজমালি জায়গাআমি কি বলব? সে বলছে তাই বাধা দিয়েছি

পাকুন্দিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান রাসেল মিয়া বলেন, এই বাচ্চাটা দাফনের ব্যাপারে তার চাচারা বাধা দিয়েছে। জরুরি নম্বরে কল পেয়ে আমরা আসি। দুই পক্ষই একটা সমাধানে এসেছে। এখন দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওর বাবার যে নিজস্ব জমি রয়েছে সেখানে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ও দাদাদের যে এজমালি সম্পত্তি রয়েছে সেখানে কবর দেওয়া হয়নি।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন