বাজিতপুরে চাঁদা না দেওয়ায় ১০ নৌকা আটকে দিলেন বিএনপি নেতা
কিশোরগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম
ছবি : বাজিতপুরে চাঁদা না দেওয়ায় ১০ নৌকা আটকে দিলেন বিএনপি নেতা
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা না পেয়ে মাঝিদের ১০টি নৌকা আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির। এদিকে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাইনি ভুক্তভোগী নৌকার মাঝিরা। তবে পুলিশ তদন্তের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।
বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর পাটুলী নৌরুটের নৌকার মাঝিদের অভিযোগ পাটুলী ঘাটে প্রতিদিন ৬০০ টাকা করে চাঁদা না দিলে যাত্রী পারাপারের নৌকাগুলো ঘাটে ভিড়তে দেওয়া হয় না। আর ৬০০ টাকা করে না দিলে নৌকাগুলো ঘাটে ভিড়তে পারবে না। তবে মাঝিরা নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ করেও বুধবার (৮ অক্টোবর) যাত্রীসহ নৌকা ঘাটে ভিড়ালে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির মাঝিদের ১০টি নৌকা আটকে দেন। এ ঘটনার পর বাজিতপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নৌকার মাঝিরা।
সরেজমিনে বাজিতপুর উপজেলার পাটুলী ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সারি করে বেঁধে রাখা হয়েছে যাত্রী পাড়াপাড়ের ১০টি নৌকা। চাঁদার না পেয়ে নৌকা গুলো আটকে রাখা হয়েছে। প্রত্যেক নৌকা থেকে প্রতিদিন ৬০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয় বলে জানান ভুক্তভোগী নৌকার মাঝিরা। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও ২দিনেও কোন সুরাহা হয়নি। তারা বলছেন, আগে প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হতো। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছেন ৬০০ টাকা। চাঁদা কোন বকেয়া না থাকা সত্ত্বেও কেন নৌকা গুলো আটকে রাখা হয়েছে তা মাঝিদের জানা নেই। বর্ষাকালে হুমাইপুর ঘাট থেকে পাটুলী ঘাট পর্যন্ত ছোট ছোট নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। নৌকা আটকে রাখায় বর্ষার মৌসুমে একমাত্র জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে বিপাকে পড়েছেন মাঝিরা।
মাঝি নুর আলম বলেন, আমরা ১০টা নৌকা চালাই। প্রতিদিন ৬০০ টাকা করে চাঁদা নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা আমাদের নৌকাগুলো আটকে দেয়। হুমাইপুর ইউনিয়নের রাশেদ, জব্বার, ফারুক, মনির, কাউসার এবং আরও কয়েকজন এসে আমাদের নৌকাগুলো আটকে দেয়।
মাঝি জাহাঙ্গীর বলেন, আগে ২০০-৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। বর্তমানে দিতে হয় ৬০০ টাকা করে। হুমাইপুর থেকে ১০টি এবং পাটালিঘাট থেকে ১০টি নৌকা মিলিত ভাবে আমরা চালাই। কিন্তু হঠাৎ করেই গতকাল এসে আমাদের নৌকাগুলো আটকে দেয়।
মাঝি মো. কামাল বলেন, আমরা অসহায় গরীব মানুষ। আমাদের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। আমরা নৌকাগুলো ভাড়া এনেছি, কিন্তু নৌকাগুলো আটকে রাখলে আমরা কি করব। বাজিতপুর থানা বিএনপির সেক্রেটারি মুনিরের নির্দেশে নৌকাগুলো আটকে রাখে তার লোকজন। আমরা সেনাক্যাম্পে গিয়েছিলাম। থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। আমরা তো নিরুপায়।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ঘাটের ইজারাদার ও দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে ইজারার টাকা তোলার দায়িত্বে থাকা এক কর্মচারী ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দৌড় দিয়ে পালিয়ে যান।
নৌকা আটকে রেখে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। হুমাইপুর ঘাটে সরকারের কোনো ইজারা নেই। উল্টো সেখানে উপজেলা বিএনপির সদস্য হেলাল খানের নেতৃত্বে অনিয়ম চলছে।
এ বিষয়ে বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, বিষয়টি দলীয় দুই পক্ষের কোন্দল ঘিরেই ঘটেছে।



