নরসিংদীতে ৭০০ দৌড়বিদের অংশগ্রহণে ম্যারাথন অনুষ্ঠিত
নরসিংদী প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২২ পিএম
ছবি : নরসিংদীতে ৭০০ দৌড়বিদের অংশগ্রহণে ম্যারাথন অনুষ্ঠিত
“রান ফর বাংলাদেশ, রান ফর হেলথ, এই স্লোগানকে সামনে রেখে নরসিংদীর রায়পুরায় অনুষ্ঠিত হলো রায়পুরা ম্যারাথন-২০২৫। ম্যারাথনে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৭০০ দৌড়বিদের অংশগ্রহণে ভোরবেলা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে উপজেলা সদর। আন্তর্জাতিক মানের এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে রায়পুরা উপজেলা প্রশাসন ও রায়পুরা রানার্স কমিউনিটি। শুক্রবার ভোর ৫টায় উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনে থেকে রায়পুরা-নরসিংদী সড়কে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্ল্যাগ-অফের মাধ্যমে শুরু হয় দৌড় প্রতিযোগিতা। চারটি ক্যাটাগরিতে অনুষ্ঠিত এই ম্যারাথনে ছিল ৪২.২ কিলোমিটার ফুল ম্যারাথন, ২১.১ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথন, ১০ কিলোমিটার দৌড় এবং শিশুদের জন্য ৫০০ মিটারের বিশেষ দৌড়।
ম্যারাথনের দিন নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় ছিল কঠোর নজরদারি। দৌড়বিদদের জন্য সড়কজুড়ে দায়িত্ব পালন করেন ২ শতাধিকের বেশি ভলান্টিয়ার, প্রায় অর্ধশত পুলিশ সদস্য, সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টিম, অর্ধশত আনসার ও গ্রাম পুলিশ সদস্য। পাশাপাশি শারীরিক অসুস্থতার কথা মাথায় রেখে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও মেডিক্যাল টিম সবসময় প্রস্তুত ছিল।
শিশুদের জন্য ৫০০ মিটারের বিশেষ দৌড় আয়োজনটি বাড়িয়ে দেয় উৎসবের আনন্দ। অংশ নেওয়া আরাফাত রহমান এক শিশু দৌড়বিদ জানায়, “ আমি এই দৌড়ের জন্য বাড়িতে একমাস অনুশীলন করেছি। এই দৌড় খুব মজার ছিল। অংশ নিতে পেরে আমি অনেক খুশি।”
১০ কিলোমিটার ম্যারাথনে প্রিথম স্থান অধিকারী মজিবর রহমান রাহী বলেন, আমি সিলেট থেকে ম্যারাথনে অংশ নিতে এসেছি। দৌড়াতে আমার ভালো লাগে ফলে দৌড় আমার নেশা হয়ে গেছে। প্রতিবারই খবর পেলেই অংশ নিই। আজকে বিজয়ী হয়ে ভালো লাখছে। সুস্থ থাকতে দৌড়ের বিকল্প নেই।”
ম্যারাথনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। কেউ এসেছিলেন পরিবারের সঙ্গে, কেউবা রানার্স কমিউনিটির সঙ্গে। নারায়নগঞ্জ থেকে আসা অনামিকা নামে বিজয়ী এক নারী দৌড়বিদ বলেন, “নারীদের সুস্থ থাকতে দৌড় খুব জরুরি। প্রত্যেকেরই খেলাধুলায় আসা উচিত।”
ম্যারাথনে বিশেষ দৃষ্টি কাড়েন ৭৩ বছর বয়সী দৌড়বিদ খবির উদ্দিন। বয়সের ভার সত্ত্বেও তিনি অংশ নেন ম্যারাথনে। তিনি জানান, ১৮ বছর ধরে দেশ-বিদেশে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। এই বয়সেও সুস্থ থাকার একমাত্র রহস্য দৌড়। তরুণরা মাদক থেকে দূরে থাকতে খেলাধুলায় আসুক।
রায়পুরা ম্যারাথনকে ঘিরে শুধু প্রতিযোগিতা নয়, স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান আয়োজকরা। বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহসম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল বলেন, আমরা রাজনীতিবিদরাও এই ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেছি। এই ম্যারাথনের মাধ্যমে মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করা এবং তরুণ সমাজকে খেলাধুলায় আগ্রহী করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ম্যারাথনে ৭০০ জন দৌড়বিদ অংশগ্রহণ করেছে। একটা সুস্থ প্রজন্মের জন্য এই ম্যারাথনের প্রয়োজন রয়েছে। তরুণদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য খেলাধুলার বিকল্প নেই। রায়পুরা ম্যারাথন কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি সামাজিক বন্ধন ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অনন্য উদাহরণ। সামনের বছর আরো বড় পরিসরে এই ম্যারাথন আয়োজন করা হবে।
পরে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তোলে দেন বাংলাদেশ জ¦ালানি ও বিদ্যুত গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, নরসিংদী জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসাইন ও পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম, রায়পুরা রানার্স কমিউনিটির পরিচালক সবুজ শিকদারসহ প্রমুখ।



