হাজার কোটি টাকা খরচেও প্রবাহ ফেরেনি যশোরের নদ-নদীতে
যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৩ এএম
যশোরের ভৈরব, কপোতাক্ষসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদীতে খনন প্রকল্পে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও প্রবাহ ফেরেনি। নদী রক্ষা কমিটি ও বিশেষজ্ঞদের মতে, দখল, দূষণ ও অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণের কারণে এসব প্রকল্প কার্যকর হয়নি।
ভৈরব নদের ওপর নির্মিত দড়াটানাসহ তিনটি সেতু প্রবাহে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দড়াটানা সেতুর উপর থেকে তাকালে নদী নয়, মনে হয় সরু খাল—পুরোটাই কচুরিপানায় ভরা। দুই তীর দখল করে নির্মিত অসংখ্য স্থাপনা থেকে বর্জ্য পড়ছে নদীতে। ফলে ভৈরবের পানি কুচকুচে কালো ও দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে।
শুধু ভৈরব নয়, জেলার কপোতাক্ষ, হরিহর, কোদলা, ইছামতী, হাকর, বেতনা, মুক্তেশ্বরী, কাজলা, চিত্রা, শ্রী, টেকা, হরি, ভদ্রা ও আতাই নদও অস্তিত্ব-সংকটে পড়েছে একই কারণে।
২০২০ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আংশিক তালিকা প্রকাশ করে জানায়, জেলায় ৬৭৩ জন দখলদার রয়েছে। পরবর্তী সময়ে তালিকা ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। যশোর সদরের ভৈরব নদের দুই তীর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দলীয় কার্যালয়, ক্লিনিক, মার্কেট, বহুতল ভবন ও বাসাবাড়ি। জেলা প্রশাসন ও পাউবো সীমানা নির্ধারণে বিলম্ব করায় এই এলাকায় অবৈধ দখলদারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনো হয়নি।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও একই চিত্র। বাঘারপাড়ায় চিত্রা নদ দখল করে রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি ও পুকুর গড়ে উঠেছে। মনিরামপুর, ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও শার্শায়ও শত শত অবৈধ দখলদার নদীর জমি দখল করে রেখেছেন। যদিও কিছু এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও পরে তা কার্যত থেমে গেছে।
ভৈরব নদের ১৩৩ কিলোমিটারের মধ্যে একাংশ প্রবাহহীন হয়ে পড়েছে। ২৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯২ কিলোমিটার পুনঃখনন এবং আরও চার কিলোমিটার ড্রেজিং করা হলেও নদীতে স্রোত ফেরেনি।
অন্যদিকে, কপোতাক্ষ নদে ২০১১ সালে শুরু হওয়া খনন প্রকল্পে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে খরচ হয়েছে ৮১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬৯ কিলোমিটার খনন শেষ হলেও পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি।
বিআইডব্লিউটিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কপোতাক্ষে ২১টি এবং ভৈরবে ৫২টি সেতু নির্মিত হয়েছে, যার বেশিরভাগই নৌযান চলাচলের মতো উচ্চতায় নয়। আবার সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য নদীর দুই তীর ভরাট করায় প্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে।
ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ অভিযোগ করেন, “নদ রক্ষায় আইন থাকলেও তা প্রয়োগ হয় না।” কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস বলেন, “নদ খননে সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় প্রকল্পের সুফল মিলছে না।”
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার দাবি করেন, চলমান খননকাজ শেষ হলে নদীগুলো প্রাণ ফিরে পাবে। জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, নদীর সীমানা চিহ্নিত করার কাজ আবার শুরু হবে। এরপর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।



