চলনবিলে অবাধে চলছে পাখি শিকার
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
চলন বিলে পাখি শিকার চলছে অবাধে-
সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলায় অবাধে চলছে জাল দিয়ে পাখি শিকার। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে তাড়াশ ও আশপাশের এলাকাগুলো। এ সুযোগে সৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারিরা , বিষটোপ, জাল ও বিভিন্ন ধরণের ফাঁদ পেতে এসব পাখি নিধন শুরু করছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাখি নিধন বন্ধে কাজ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে পাখি শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তাড়াশ উপজেলার কুন্দাশন এলাকার লিটন পারভেজ নামের একজন জানান, ফসলের জমিতে পানি দেওয়ার সময় মাটির নিচে থেকে উঠে আসা পোকামাকড়সহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ খেতে ব্যস্ত হয় সাদা বক, শালিক, চড়ুই, ডাহুক, চ্যাগা পাখি । এ সময় একশ্রেণির পাখি শিকারিরা ছোট মাছ বা পতঙ্গের ভেতরে বিষাক্ত কিটনাশক ঢুকিয়ে ছেড়ে দেয়। সেই পোকাগুলো খেয়ে পাখিরা মারা যায়। তখন পাখিগুলো ধরে কাছে রাখা ব্লেড, ছুরি দিয়ে জবাই করা হয়।
এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বড় বাঁশের সঙ্গে আকাশের দিকে উঁচু করে বড় ধরনের জাল পেতে রাখা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে পাখিদের তাড়া করলেই পাখিগুলো উড়তে গিয়ে জালে আটকা পড়ে। এই সুযোগে শিকারিরা পাখি ধরে বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখছে। পরে সময়মত পাখিগুলো বিক্রি অথবা জবাই করছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাড়াশ ভিলেজ ভিশন বাংলাদেশ এর পরিচালক মো শরীফ খন্দকার জানান, আমরা প্রতিনিয়ত পাখি নিধন রোধে কাজ করছি। তবে স্থানীয় প্রশাসনের জোরালো কোনো উদ্যোগ না থাকায় বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব পাখি শিকার।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সাল থেকে আমরা চলনবিল এলাকায় পাখি শিকারী বন্ধে কাজ করছি। আমরা মূলত পাখি শিকারিদের নিষেধ ও পাখি অবমুক্ত করে থাকি। এতে পাখি শিকারিরা ততোটা ভয় পায় না। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে একটু নজর দিলে কেউ আর অবাধে পাখি শিকার করতে পারবে না চলনবিলে অবাধে চলছে জাল দিয়ে পাখি শিকার।
জীব ও বৈচিত্র্য রক্ষায় চলনবিল অঞ্চলে কাজ করছে আরেকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন জীবন। স্বাধীন জীবনের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক নাসিম জানান, তারা কয়েক বছরে প্রায় দুই হাজার শিকার করা পাখি উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছেন।
এ অঞ্চলে আরও এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দি বার্ডস সেফটি হাউজের চেয়ারম্যান মামুন বিশ্বাস জানান, চলনবিল অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবী কিছু সংগঠন পাখি রক্ষায় কাজ করছেন। তারা শিকার করা পাখি অবমুক্ত করলেও তৃণমূল পর্যায়ে জনসচেতনতার অভাব ও সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের অভাবে এ বিলে স্থায়ীভাবে পাখি শিকার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তাড়াশে পাখি নিধন বিষয়ে তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিদ্যুৎ কুমার জানান, বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী পাখি নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ। আর শীত বা বর্ষার মৌসুম শেষে শরৎকালে খাদ্য ও নিরাপত্তার জন্য দেশীয় পাখি চলনবিলে যায়। এসব পাখি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সৌন্দর্য বর্ধন এবং ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশকে রক্ষা করে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, পাখি শিকার একটি অপরাধ। তবে কেউ পাখি শিকার করছে এমন সংবাদ পেলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।



