সাজেকে ইঁদুর উপদ্রবে খাদ্য সঙ্কটের শঙ্কা
মোহাম্মদ আলী, রাঙ্গামাটি
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৩১ পিএম
ছবি-যুগের চিন্তা
রাঙ্গামাটির সাজেক ভেলীতে জুমিয়া পরিবারের জুম চাষে ইঁদুর উপদ্রব দেখা দিয়েছে। ফলে বহু কৃষকের জুমের ফসল ঘরে তোলার আগে ক্ষেত নষ্ট করে দিয়েছে।
সম্প্রতি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম পাঁচটি গ্রামে জুমক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে করে সাজেক ইউনিয়নের প্রায় ২৩২ পরিবারের ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। জুমচাষ নির্ভর এই এলাকায় খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারণা। কৃষি বিভাগ বলছে, এই বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে কি পরিমান ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাজেকে ধানী জমির নেই ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী একমাত্র জুম চাষের ওপর নির্ভশীল। গত আগস্টের শেষের দিকে জুমের ধান পাকা শুরু হয়। এরমধ্যে রাতে ঝাঁকে–ঝাঁকে ইঁদুর জুমের ক্ষেতে গিয়ে ধান খেয়ে নষ্ট করেছে। এতে প্রায় ২৩২ পরিবারের জুমের ধান নষ্ট হওয়ায় তারা ঘরে তুলতে পারছেন না ফসল। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে শিয়ালদাইলুই ,হাচ্চ্যাপাড়া ,জামপাড়ায় অরুণ পাড়া, ও লুংথিয়ানপাড়া। এছাড়া সাজেক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জুম ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু পাহাড়ের ঢালে আগাছা কেটে আগুনে পুড়িয়ে চাষ করা হয় জুম ফসল। জুম চাষ পাহাড়িদের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা হলেও এখানে জুম চাষ জীবিকার অন্যতম উৎসও। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় জুম ধানের আবাদ হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন (চাল)। তবে কেবল বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১ হাজার ৫৪৭ হেক্টর পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ধর হয়েছে ১ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন।
সাজেক ইউনিয়নের শিয়ালদাই মৌজার হেডম্যান জৈইপুই থাং ত্রিপুরা জানান, তার মৌজা বাদেও তুইচুই, ব্যাটলিংকসহ কয়েকটি স্থানে আগস্টের শেষদিকে জুমের ধান পাকা শুরু হলেও ঝাঁকে–ঝাঁকে ইঁদুর জুম ক্ষেতে গিয়ে ধান নষ্ট করে ফেলেছে। এছাড়া কোনো কোনো এলাকায় ধানে ফুল এসেছে, আবার কোনো জুম ক্ষেতে ধানের শীষ এসেছে; সেগুলো ইদুরেরা ধান গাছের গোড়া কেটে নষ্ট করে দিয়েছে।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা জানান, সাজেকে প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে। এবারও সাজেকে ইঁদুর বন্যার কারণে শিয়ালদাই পাড়া, হাইচ্চ্যাপাড়া, জামপাড়াসহ ৫টি গ্রামের জুম চাষিদের সমস্ত ধান নষ্ট হয়েছে। তারা কোন ধানই ঘরে তুলতে পারছেন না। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার চেষ্টা চালাচ্ছি।কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের উপপরিচালক বলেছেন তিনি বিষয়টি নিয়ে অবগত নন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ–খবর নেয়া হবে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমেনা মারজান বলেন, আমি সাজেকের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে বলেছি। এছাড়া ইঁদুর থেকে জুম চাষিদের ফসলগুলো কিভাবে রক্ষা করা যায় বা প্রতিকার বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেছি।
বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি । এখানে ২০১৭ সালে দুর্গম কয়েকটি গ্রামে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। সে সময় সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্যশস্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। এরপর ২০২২ সালেও কয়েকটি ইঁদুরের উপদ্রবে জুমের ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েন প্রান্তিক জুমচাষিরা।তখনও প্রশাসনের তরফ থেকে সেখানে সাহার্য করা হয়েছিল।



