ভাঙন-স্রোতে বিপর্যস্ত পাটুরিয়া ফেরিঘাট
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০২:২৭ পিএম
তীব্র স্রোত আর নদীভাঙনের কারণে পাটুরিয়ার ৪ নম্বর ফেরিঘাটের র্যাম্প ডুবে যায়। ছবি : সংগৃহীত
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান নৌপথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া। প্রতিদিন এ পথে দেড় থেকে দুই হাজার যানবাহন ও কয়েক হাজার যাত্রী পারাপার হন। পদ্মা সেতু চালুর পর চাপ কিছুটা কমলেও, নৌপথটির কৌশলগত গুরুত্ব অটুট রয়েছে। তবে বর্ষা এলেই তীব্র স্রোত আর ভাঙনে ফেরিঘাটগুলো বড় সংকটে পড়ে।
এবারের বর্ষায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। চলতি মাসের ৫ আগস্ট পাটুরিয়ার লঞ্চঘাট পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একইসঙ্গে আশপাশের পাঁচটি বাড়ি ও একটি মুরগির খামার ভেঙে গেছে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ফেরিঘাট। গত দুই সপ্তাহে এসব ঘাটের র্যাম্প বারবার ডুবে যাওয়ায় প্রতিদিন গাড়ি ওঠানামায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএকে ঘন ঘন জরুরি মেরামতে নামতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে এ পরিস্থিতি অনেকাংশে ঠেকানো যেত। ঢাকা থেকে আসা যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার ফেরিঘাটের অবস্থা একেবারেই ভয়াবহ। যেকোনো সময় ঘাট বিলীন হয়ে যেতে পারে। ট্রাকচালক রুবেল হোসেন বলেন, র্যাম্প ডুবে যাওয়ার পর তড়িঘড়ি মেরামত করা হলেও সেগুলো টেকসই হয় না। ফলে ট্রাক ওঠানামায় সবসময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
স্থানীয় পরিবারগুলোও ভাঙনে সর্বস্ব হারাচ্ছে। পাটুরিয়া ৫ নম্বর ঘাটের পাশের বাসিন্দা মমতাজ বেগম জানান, মাঝরাতে তাদের বাড়িঘর নদীতে তলিয়ে গেছে। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা আশ্রয়হীন। একইভাবে আরও কয়েকজন স্থানীয় বলেন, ঘাট এলাকার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাওয়ায় জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান, ফেরিঘাট এলাকা তাদের আওতার বাইরে হলেও জেলার অভ্যন্তরে নদীভাঙন রোধে কাজ চলছে। অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, পাটুরিয়ায় এ ধরনের ভাঙন গত দুই দশকে হয়নি। প্রচণ্ড স্রোতের কারণে প্রতিটি ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা নিয়মিত জিও ব্যাগ ফেলে তা রক্ষার চেষ্টা করছি এবং বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম আব্দুস সালাম বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘাট ক্ষতির মুখে পড়ছে। তারপরও জনস্বার্থে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। তবে তীব্র স্রোতের কারণে আগের তুলনায় দ্বিগুণ সময় লাগছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, স্থায়ী সমাধান ছাড়া পাটুরিয়া ফেরিঘাট বড় বিপদের মুখে রয়েছে।



