সরবরাহ বাড়লেও ইলিশ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে
চাঁদপুর প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চাঁদপুরে ইলিশের বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। একসময় নাগালের বাইরে থাকা ইলিশ এখন তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক দিনে সব সাইজের ইলিশের কেজি প্রতি দাম ২, শত থেকে ৪,শত টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে বাজারে এ স্বস্তির বিপরীতে জেলেদের দুর্দশা বেড়েছে বহুগুণ।
বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, আড়তগুলোতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ইলিশ। পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট পুরো ঘাট। খুচরা বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৪ শত থেকে ২৫ শত টাকায়, যা কয়েকদিন আগেও ছিল প্রায় ৩ হাজার টাকা। মাঝারি আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ১৫ শত থেকে ১৮ শত টাকায়, আর ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২ শত থেকে ১৩ শত টাকায়।
সরবরাহ বেড়েছে, দাম কমেছে
চাঁদপুর মাছ ঘাটের আড়তদাররা জানান, মৌসুমের শুরুতে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইলিশ সরবরাহ ছিল তুলনামূলক কম। ফলে বাজারে দাম বেড়ে যায়। তবে গত ৭ ও ৮ আগস্ট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকটি বড় ট্রলার ইলিশ নিয়ে ঘাটে ভিড়লে সরবরাহ বাড়ে। তবে শরীয়তপুর জেলেরা চাঁদপুরে ইলিশ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। সম্প্রতি শরীয়তপুরের জেলেরা পাওনা টাকার হিসাব মিলাতে না পারায় তারা চাঁদপুরে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে সরবরাহ আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
এক আড়তদার একে জি ফিশ ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী হাজী আব্দুল খায়েরের ছেলে মো. ঈমান হোসেন গাজী জানান, বিগত দিনে শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রচুর ইলিশ এ ঘাটে আসতো। কিন্তু দাম বাড়তে থাকায় অনেক আড়তদার সময়মতো জেলেদের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। এতে জেলেরা চাঁদপুরে ইলিশ বিক্রি করা বন্ধ করেছে। এর প্রভাব পড়ছে পুরো ঘাটে।
জেলেদের খরচ বেড়েছে, মুনাফা নেই
নদীতে ইলিশ উৎপাদন কমে যাওয়ায় জেলেদের খরচের সঙ্গে মিলছে না আয়। মাঝঘাটে ইলিশ নিয়ে আসা জেলে মো. নাছির মাঝি বলেন, একটি নৌকায় প্রায় ১২ লাখ টাকা মূলধন খাটানো আছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নিয়ে মাছ ধরি। শুধু ইঞ্জিনের তেলেই দৈনিক ৫০ লিটার লাগে। তেল ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে দিনে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু কখনো ৫ হাজার, কখনো ১০ হাজার, আবার কখনো ১৫ হাজার টাকার বেশি মাছ পাই না। এতে ঋণের বোঝা প্রতিদিন বাড়ছে।
রামগঞ্জ থেকে আসা ক্রেতা মো. ফাহিম জানান, এবার ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু পূর্বের তুলনায় এখনও অনেক বেশি। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ কিনেছি ১৫৫০ টাকা কেজি দরে, যা গত বছর ছিল ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা।
লোকসান কাটিয়ে উঠার আশায় ব্যবসায়ীরা
আড়তদাররা আশা করছেন, চলমান সরবরাহ যদি অব্যাহত থাকে তবে গত কয়েক মাসের লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তবে জেলেরা মনে করছেন, নদীতে ইলিশের উৎপাদন হ্রাস ও অতিরিক্ত খরচের কারণে তারা টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।
চাঁদপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের মতে, মৌসুম জুড়ে সুষ্ঠু সরবরাহ এবং সরকারিভাবে জেলেদের সহযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে। অন্যথায় দাম আবারও বেড়ে গিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।



