Logo
Logo
×

সারাদেশ

পদ্মা সেতুর প্রভাবে বন্ধ পিরোজপুর-ঢাকা লঞ্চ চলাচল, ঘাটে নেমেছে নিস্তব্ধতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ পিএম

পদ্মা সেতুর প্রভাবে বন্ধ পিরোজপুর-ঢাকা লঞ্চ চলাচল, ঘাটে নেমেছে নিস্তব্ধতা

ছবি : সংগৃহীত

এক সময় বিকেল নামলেই পিরোজপুরের হুলারহাটসহ জেলার বিভিন্ন লঞ্চঘাটে যাত্রীদের ভিড়ে জমজমাট পরিবেশ দেখা যেত। ব্যাগ কাঁধে মানুষজন সারিবদ্ধভাবে লঞ্চে উঠতেন, কেউ পরিবার নিয়ে, কেউবা ব্যবসার কাজে ঢাকা যেতেন। নদীর ঢেউ কেটে লঞ্চ ছুটে চলত রাজধানীর পথে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে নৌপথই ছিল ঢাকা-পিরোজপুর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম।

কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই দৃশ্য এখন শুধুই স্মৃতি। এক সময় প্রতিদিন ৭-৮টি লঞ্চ শত শত যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করলেও, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এ রুটে কোনো লঞ্চ চলাচল করছে না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, যাত্রী সংকটের কারণে লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সড়কপথে যাতায়াত সহজ হওয়ায় যাত্রীরা বাসে যেতে শুরু করেছেন। ফলে লঞ্চ চালু রাখা আর ব্যবসায়িকভাবে সম্ভব হচ্ছে না। এখন পিরোজপুর থেকে ঢাকায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়, যা লঞ্চের তুলনায় অনেক দ্রুত।

পিরোজপুরের হুলারহাট, স্বরূপকাঠি, কাউখালি, ভান্ডারিয়া, ইন্দেরহাটসহ আটটি ঘাট থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৮০০ যাত্রী লঞ্চে ভ্রমণ করতেন। লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব যাত্রী এখন বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

সরেজমিনে হুলারহাট লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, এক সময়ের ব্যস্ত ঘাটটি এখন ফাঁকা পড়ে আছে। বিলাসবহুল লঞ্চের জায়গায় এখন রয়েছে বালিবোঝাই কার্গো। কিছু যাত্রী অভ্যাসবশত ঘাটে এসে লঞ্চের অপেক্ষায় থাকেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাসেই গন্তব্যে যেতে হয়। এতে যেমন কষ্ট হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে খরচও।

লঞ্চ বন্ধের প্রভাব পড়েছে ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসায়ও। দোকান, খাবারের হোটেল, ফেরিওয়ালারা যাত্রীদের ওপর নির্ভর করতেন। যাত্রী না থাকায় ব্যবসায় পড়েছে ধস।

হুলারহাট লঞ্চ টার্মিনালে বসে আমিনুল ইসলাম বলেন, “দূরপাল্লার রুটে লঞ্চই সবচেয়ে নিরাপদ ও আরামদায়ক। এখন বাসে যেতে হয় ভিড় আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। আমরা চাই, আবার লঞ্চ চালু হোক।”

স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার শেখ বলেন, “লঞ্চে বিকেলে উঠে সকালে ঢাকা পৌঁছাতাম। এখন বাধ্য হয়ে বাসে যেতে হয়, খরচও বেশি, ঝুঁকিও বেশি।”

চায়ের দোকানি মো. আবিদ মোল্লা বলেন, “আগে যাত্রীদের ভিড়ে বিক্রি ভালো হতো। এখন দিনে ২০০ টাকারও বিক্রি হয় না, সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।”

ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “লঞ্চ বন্ধ হওয়ায় শুধু যাত্রী নয়, ব্যবসায়ীরাও বিপদে পড়েছেন। ঘাটকে ঘিরে বহু মানুষের জীবিকা ছিল। এখন ঘাট ফাঁকা পড়ে আছে।”

পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, “হুলারহাট লঞ্চঘাট একটি ঐতিহ্যবাহী ঘাট। পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চ চলাচল কমে গেছে। স্থানীয় লঞ্চ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পদ্মা সেতু একদিকে খুলে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা, সহজ করেছে যোগাযোগব্যবস্থা। তবে তার ছায়া পড়েছে নদীপথে। পিরোজপুরবাসীর আশা, একদিন হয়তো আবারও ঢাকার পথে লঞ্চ ছাড়বে, নদীর বুক চিরে চলবে তাদের প্রিয় যাতায়াতের মাধ্যম।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন