শরীয়তপুরে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বাধায় নবজাতকের মৃত্যু
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫৩ এএম
ছবি : সংগৃহীত
শরীয়তপুরে স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কারণে ঢাকা বা অন্য জেলার অ্যাম্বুলেন্স রোগী পরিবহন করতে না পারায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে শরীয়তপুর পৌর এলাকার নিউ মেট্রো ক্লিনিকের সামনে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও নিহত শিশুর পরিবার জানায়, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর এলাকার নূর হোসেন সরদারের স্ত্রী রুমা বেগম প্রসব বেদনায় দুপুরে নিউ মেট্রো ক্লিনিকে ভর্তি হন। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিনি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর নবজাতক শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকায় চিকিৎসক দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।
শিশুটির পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ হাজার টাকায় একটি ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ক্লিনিকের সামনেই স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক সবুজ দেওয়ান ও আবু তাহের দেওয়ান গাড়ির গতিরোধ করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা নিজেদের সিন্ডিকেটভুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য অ্যাম্বুলেন্সকে ঢাকায় যেতে দেন না।
এসময় ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. মোশারফ মিয়ার কাছ থেকে জোরপূর্বক চাবি নিয়ে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। রোগীর স্বজনদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ায় প্রায় ৪০ মিনিট আটকে থাকার পর নবজাতক মারা যায়। ঘটনার পর অভিযুক্ত দুই চালক পালিয়ে যায়।
স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুরে একটি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে, যারা বাইরের গাড়িকে রোগী বহনে বাধা দিয়ে জোরপূর্বক নিজেদের গাড়িতে তুলতে বাধ্য করে। তারা আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের বর্বরতা বন্ধ না হলে আরও প্রাণহানি ঘটতে পারে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক মোশারফ মিয়া বলেন, রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দ্রুত ঢাকায় নিতে চেয়েছিলাম। স্বজনরাও আমার গাড়িতেই যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা গাড়ি বন্ধ করে চাবি নিয়ে নেয় এবং আমাকে মারধর করে। প্রায় ৪০ মিনিট আটকে থাকার পর শিশুটি মারা যায়।
নিহত শিশুর নানী সেফালী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার নাতিকে ঢাকায় নিতে পারলেই বাঁচত। তারা আমার নাতিকে বাঁচতে দেয়নি। স্বজন রানু আক্তার বলেন, অনেক অনুরোধ করেছিলাম গাড়ি ছেড়ে দিতে, কিন্তু তারা শোনেনি। সিন্ডিকেটের জন্যই আমাদের বাচ্চাটি মারা গেছে।
পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



