মহেশখালীতে ‘নারী ফুটবলারের’ সাথে কি হয়েছিল ?
কক্সবাজার প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৪ পিএম
ছবি-সংগৃহীত
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ কয়েকটি অনলাইন মাধ্যমে কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব ১৯ জাতীয় দলের নারী ফুটবলার পারভীন সুলতানার পায়ের রগ কেটে দেয়ার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয় উগ্রবাদীরা ‘নারী ফুটবলকে ইসলামে হারাম বলে পারভীন সুলতানার বাম পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী নানা আলোচনার পর মহেশখালী থানার পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সচেতন মহলের সাথে আলাপ করা হয় প্রকৃত ঘটনাটি কি জানার জন্য।
সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, এই ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল। ওইদিন মহেশখালীর কালামারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা এলাকায় কথা কাটাকাটির জের ধরে রশিদ আহমেদ নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করা হয় একই এলাকার অমিত ইকবাল ও কামরুল হাসান নামের দুই ভাইকে। যারা সম্পর্কে ফুটবলার পারভীন সুলতানার আপন ভাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ওসমান গণি জানান, নিহত ব্যক্তি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং অভিযুক্ত অমিত ইকবাল ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন।
এই জনপ্রতিনিধি সহ স্থানীয় এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, রশিদ আহমেদের মৃত্যুর জের ধরে ওই উত্তেজিত জনতা নারী ফুটবলারের বাড়ি ঘেরাও করে ভাংচুর চালায়। এসময় কামরুল হাসানকে ধরে পুলিশে সোপর্দও করে জনতা।
ঘটনার সময় বাড়িতে অভিযুক্ত অমিত ইকবাল ও কামরুল হাসানের মা মোহছেনা বেগম, বোন পারভীন সুলতানা, তানিয়া আকতার টিপু, রুজিনা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ইউপি সদস্য ওসমান গণি বলেন, রশিদের হত্যার দিন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম, পুলিশও ছিলো। ঘটনার দিন পারভীন তার বাড়িতে কোথাও ব্যথা পেতে পারে। তবে তার পায়ের আঘাত কিংবা উগ্রবাদীরা তার পায়ের রগ কেটে দেয়ার মতো বিষয় আমি শুনিনি এবং জানিনা।
ঘটনার পরের দিনে নিহত রশিদ আহমেদের স্ত্রী খুরশিদা বেগম বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ৫ নম্বর আসামি করা হয় ফুটবলার পারভীনকে।
১৪ এপ্রিলের ঘটনার দিন থেকে পারভীনসহ ওই পরিবারের কাউকে এলাকায় দেখতে পাননি বলে জানান ওসমান গণি।
এরপর গত ৩ জুন স্থানীয় একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে পারভীন অভিযোগ করেন পারভেজ বাহিনীর প্রধান পারভেজসহ একাধিক সন্ত্রাসী তার ভাই ও বোনদের মারধর করে বাড়িঘর ভাংচুর করে, জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এসময় তার পায়ের রগ কেটে দেয়।
যা নিয়ে ১৩ মে পারভীন বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে মহেশখালী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি করা হয় নিহত রশিদ আহমেদের স্ত্রী খুরশিদা বেগমসহ তার পরিবারের একাধিক সদস্যদের।
তবে মামলার এজাহারের কোথাও উগ্রবাদীরা তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে এমন কথা উল্লেখ করা হয়নি।
আদালতের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহেশখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমিত বড়ুয়া এমন তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছে, ‘মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। পারভীন আহত হওয়ার মেডিক্যাল রিপোর্ট এখনো না পাওয়ায় প্রতিবেদন জমা দিতে পারিনি।
সুমিত বড়ুয়া বলেন, “এটি রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে সৃষ্ট ঘটনা, উগ্রবাদীরা নারী ফুটবলারের পায়ের রগ কেটে দেয়ার বিষয়টি সত্য নয়”।
মহেশখালী থানার ওসি মঞ্জুরুল হক জানান, উগ্রবাদীরা নারী ফুটবলারের পায়ের রগ কেটে দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। অভিযোগকারী রশিদ হত্যা মামলার একজন আসামি। সে বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা করেছেন দুইমাস আগে, তার তদন্ত চলছে।



