ছবি - চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা খুলনার অলিগলি অস্ত্র হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে
খুলনায় খুন, মাদক কারবার, হামলা, চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। তালিকাভুক্ত একাধিক অপরাধী গ্রেফতার হলেও চিহ্নিত অনেক সন্ত্রাসী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। হামলা, মাদক কারবার, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য থামছেই না। অপরাধীদের পুলিশ গ্রেফতার করলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না অপরাধ। তবে নাগরিক সমাজ মনে করছে আইনের শাসন বাস্তবায়ন হলে কমে যাবে অপরাধ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অন্তর্গত ৮ থানায় গত দশ মাসে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হয়েছেন ২৭ জন। এসব ঘটনায় ২০টি মামলা হয়েছে। মাদক নিয়ে দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তার ঘিরে গত ১০ মাসে ঘটেছে প্রায় ৯০ ভাগ খুনের ঘটনা।
এছাড়াও জুলাই মাসের একাধিক ঘটনা সূত্রে দেখা যায়, ৫ জুলাই খুলনা নগরীর ওয়েস্টার্ন ইন হোটেল থেকে শান্তা ইসলাম (৪২) নামের এক নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ, ৫ জুলাই মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বে মেহেদি হাসান রোহান (২১) নামের এক তরুণকে লবণচরা এলাকায় গুলি করে প্রতিপক্ষ মাদক কারবারিরা, ১০ জুলাই বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার অফিসের প্রধান সহকারী মো. হাফিজুর রহমান (৫৮) দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন, ১১ জুলাই দুপুরে নগরীর মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে গুলি ও পায়ের রগ কেটে হত্যার শিকার হন যুবদল নেতা মাহাবুবুর রহমান মোল্যা, ১৩ জুলাই সুশান্ত কুমার মজুমদার অপহরণ হওয়ার পর ঘটনার দিন রাতে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে, গত ২১ জুলাই খুলনায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে জাকির হোসেন (৫০) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন, ২৩ জুলাই দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে টিটু (৪৫) নামের এক যুবক গুরুতর জখম হন, ২৫ জুলাই রাতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা ও মারধরে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আট যুবক।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের মধ্যে গ্রেনেড বাবু, মিরাজ, সজিব, আশিক, নূর আজিম, বডি রাকিব, মোটা সবুজ, চিংড়ি পলাশ, হাড্ডি সাগর, ঢাকাই শামীম, শেখ পলাশ, কালা লাভলু অন্যতম।
আরও জানা যায়, চিহ্নিত ও আলোচিত গ্রেনেড বাবু দেশের বাইরে থেকে তার সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। তার অনুসারী অনেকে আওয়ামী লীগের নেতাদের শেল্টারে খুলনা দাপিয়েছে। ৫ আগস্টের পর অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। বাকিরা আত্মগোপনে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা মহানগর ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, খুলনা শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মধ্যে গ্রেনেড বাবু, আশিক ও নূর আজিম আলোচিত নাম। ৫ আগস্টের পর নূর আজিমসহ বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যদের আটক করা হয়। তবে আশিক ও গ্রেনেড বাবুকে আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। আশিক বর্তমানে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আত্মগোপনে রয়েছে এবং গ্রেনেড বাবু আত্মগোপনে থাকলেও বিভিন্ন ঘটনায় তার নাম উঠে আসছে। এসব গ্রুপের সঙ্গে বাকি সন্ত্রাসীরা কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। চিহ্নিতদের তালিকা ধরে অনেককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে এবং বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, অবৈধ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। কিশোর গ্যাং আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মাদক কারবারে কিশোর গ্যাংগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশ এখনো সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় হতে না পারায় সন্ত্রাসীরা তাদের কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার মতো ঘটনাও ঘটছে। বলতে গেলে মানুষের মধ্যে এখন সিম্প্যাথি নেই।
তিনি আরও বলেন, পুলিশকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরও কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। শুধু খুলনা নয়, সারাদেশে অপরাধ নির্মূল করতে হবে। আইনের শাসনকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। মাদক কারবারিরা শুধু মাদক না, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও জড়িত। তাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, মাদক কারবার পরিচালনা এবং মাদক বহনে কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোকে ব্যবহার করা হয়। কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো মাদকাসক্ত হওয়ায় তাদের দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও করানো হয়। সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান বলেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিদের ধরতে আমরা সক্রিয় রয়েছি। যেকোনো ফৌজদারি অপরাধ করলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আইনের আওতায় আনছি।
তিনি আরও বলেন, চুরি, ছিনতাই এবং হামলার ঘটনা ঘটলে আমরা শর্টটাইমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনছি। পূর্বের তুলনায় অপরাধের ঘটনা অনেকটা কমেছে। সামনে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য আরও কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।



