নোয়াখালীতে পানিবন্দি ১৭ হাজার পরিবার, ক্ষতির পরিমাণ ২৪০ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
ছবি- সংগৃহীত
নোয়াখালীতে টানা অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় জেলার ছয়টি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ২ লাখ ৩ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় পড়েন। এখনও পর্যন্ত ১৬ হাজার ৯৩০ পরিবার পানির মধ্যে আটকে রয়েছেন।
এ দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে—পুকুর ও মাছের খামার ভেসে যাওয়ায় বড় মাছের ক্ষতি হয়েছে ১১২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং পোনা মাছের ক্ষতি ২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। কৃষিতেও দেখা দিয়েছে চরম সংকট—৫ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি এবং ২ হাজার ৬৬০ হেক্টরের ফসল আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ৮৯১ হেক্টর জমিতে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫১ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
সেনবাগ, কবিরহাট ও সুবর্ণচরে ৫৮টি বসতঘর আংশিকভাবে এবং একটি ঘর সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতে হাঁস-মুরগি মারা যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এছাড়া জেলার ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আনুমানিক ক্ষতি প্রায় ৩০ কোটি টাকা এবং নদীতীর রক্ষা বাঁধে ক্ষতি হয়েছে ২৩ কোটি টাকা।
সুবর্ণচরের কৃষক আনোয়ার মিয়া জানান, চারদিকে পানিতে তলিয়ে থাকায় বীজতলা তৈরির জায়গা পাচ্ছেন না এবং পুঁজি সংকটে উঁচু জমিও ভাড়া নিতে পারছেন না। সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি পড়েছেন বড় সংকটে। তাঁর মতে, সরকারি সহায়তা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব।
কাদিরহানিফ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জানান, তাঁর ওয়ার্ডের ৫৫ শতাংশ বাড়ি এখনো পানিতে নিমজ্জিত। নোয়াখালী খালের পানি নামার গতি ধীর হওয়ায় দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হতে পারে।
জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, জুলাই মাসে গড় বৃষ্টিপাত যেখানে ৬৯০ মিলিমিটার হওয়ার কথা, সেখানে প্রথম দশদিনেই ৬২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই অতিবৃষ্টি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে এবং পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সমন্বিত পরিকল্পনা এবং জরুরি সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।



