Logo
Logo
×

সারাদেশ

মাহমুদ হাসানের ফেসবুক পোস্ট থেকে গোপালগঞ্জের ঘটনা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম

মাহমুদ হাসানের ফেসবুক পোস্ট থেকে গোপালগঞ্জের ঘটনা

এনসিপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ‘জুলাই পদযাত্রা’র আজকের গন্তব্য ছিল গোপালগঞ্জ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার এলাকায় এনসিপির যাত্রাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যেন ওত পেতে ছিল আগে থেকেই। পথে পথে ব্যাড়িকেট সৃষ্টি আর জায়গায় জায়গায় গাছ ফেলে আগুন, সবার হাতে ঢাল-তলোয়ার, টেঁটা, বল্লম, সড়কি, লাঠি, রড, বাটাম, দা-ছ্যান্দা, বড় ঐশী ও লম্বা লম্বা ধাঁরালো অস্ত্রসহ রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।

তারা পুলিশের গাড়ি পোড়ানোসহ আক্রমণ করে এনসিপির অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের গাড়িবহরে। এককথায় এনসিপির শীর্ষ নেতারা আক্রান্ত হন এ হামলায়। এর আগে এনসিপির এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ সদরে বুধবার সকালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মুখোশ পরে পুলিশের পিকআপভ্যানে অগ্নিসংযোগ করার ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এছাড়া সকালে সদর উপজেলার গান্ধীয়াশুর এলাকায় ঘোনাপাড়া-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এরপর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গান্ধীয়াশুর এলাকায় ইউএনও'র গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেছে পতিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। আর দুপুর ১টা ৩৫ মনিটের দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় আয়োজিত সমাবেশের মঞ্চে হামলা চালায় তারা। এ সময় সমাবেশের মঞ্চে থাকা সাউন্ড বক্স, মাইক, চেয়ার ভাঙচুরসহ উপস্থিত এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে ওরা

গোপালগঞ্জের সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় আবারও হামলার মুখে পড়ে এনসিপি নেতাদের বহনকারী গাড়িবহরএমনকি আওয়ামী লীগ-যুবলীগনিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হামলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমনাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

সাংবাদিকদের কাছে এনসিপি নেতা নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা যখন রওনা দিয়েছি, তখন গ্রাম থেকে যত আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, সারা বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন এসে আমাদের ওপর হামলা করেছেআমরা এখন একটি জায়গায় অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছিপ্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি শান্তকিন্তু পুলিশ প্রশাসন, আর্মি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।’

এর আগে, শহরের সমাবেশস্থল থেকে বের হওয়ার পথেই কেন্দ্রীয় নেতাদের বহনকারী গাড়িবহরের ওপর ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সেই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। পুলিশ ও র‍্যাবের পাহারায় এনসিপির নেতাদের শহর থেকে বাইরে বের করার চেষ্টা করা হলেও ব্যাপক হামলার মুখে তাদের আবার শহরে ফিরিয়ে আনা হয়। কিছুক্ষণ পরে সেনাবাহিনীর একটি টহল টিম সেখানে এলে তারাও হামলার মুখে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে বলে ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন সাংবাদিকরাএকপর্যায়ে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহর ঘুরিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ি থেকে নামিয়ে এনসিপি নেতাদের পুলিশ সুপারের দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেনাবাহিনীর এফএসিতে করে গণ-অভ্যুত্থানের নায়করা গোপালগঞ্জ ত্যাগ করতে দেখা গেছে।

ঘটনায় কেউ কেউ মুচকি হাসছেন, কেউ বা হাততালি দিচ্ছেন- এই ভেবে যে ছেলেগুলো বেশি বাড়াবাড়ি করছে, এবার কিছুটা শায়েস্তা হলো। তবে তৃতীয় নয়নে দেখলে এ ঘটনা একটি অশনিসংকেত। ফ্যাসিস্টবিরোধী শক্তি, অন্তর্বর্তী সরকারগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা মানুষের কাছে এ ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পূর্ব ঘোষিত ও প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কেন এমন হামলা হলো? এ সাহস পেল কিভাবে পতিত শক্তি? কারা ইন্ধন দিল? নিরাপত্তার দুর্বলতা কোথায় ছিল? গোপালগঞ্জ দেশের কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়, যে যা খুশি তা করা যাবে বা করতে করতে দেওয়া যাবেজানা যায়, স্বরাষ্ট্রস্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সারাদিন গোপালগঞ্জের সিসিটিভির ফুটেজ দেখেনকিন্তু কোন ব্যবস্থা নেননি

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের এত বড় বিজয়কে সংহত না করে যারা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদের অনৈক্য ও কামড়াকামড়ির ফসল গোপালগঞ্জে পতিত ফ্যাসিস্টের এ শক্তি প্রদর্শনী। আর পলাতক শাসকের দোসর সন্ত্রাসীরা যে এখনো বাইরে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে গোপালগঞ্জে আজ তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এই ভয়ানক রূপের বহিঃপ্রকাশও বটে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারসহ তাই অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এখনই সতর্ক হতে হবে তা না হলে গোপালগঞ্জ রাজধানীর খুব কাছে চলে আসবে। তখন কিন্তু পস্তাতে হবে স্বপ্ন দেখা অনেককে। বিপ্লবীরা পরাজিত হলে সুবিধা প্রত্যাশীরা যে গহ্বরে নিমজ্জিত হবেন সে কথাও মনে রাখতে হবে।

শেষ কথা : গোপালগঞ্জে তো এনসিপি ও ছাত্র শিবির নেই। তবে কারা বিএনপি নেতাদের নামে তৈরি করা তোরণগুলো গুঁড়িয়ে রাস্তার সাথে মিশিয়ে দিল? তবে কি এনসিপি নয় টার্গেট পয়েন্ট অন্য কিছু? কারণ আজই দাবি উঠেছে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কিভাবে সম্ভব? চিরুনি অভিযান কোথায় চলছে? গোপালগঞ্জেই এত অস্ত্র আর এত সন্ত্রাসী- প্রশ্ন কিন্তু এটাও।


Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন