২০টি পাঠাগার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই উপহার দিলেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম
নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৪ পিএম
ছবি : ২০টি পাঠাগার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই উপহার দিলেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম
নারায়ণগঞ্জে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে ও জ্ঞানচর্চা উৎসাহিত করতে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। শনিবার (১৩ জুলাই) জেলা সদর উপজেলার ২০টি পাঠাগার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের বই উপহার দেন তিনি।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত অনাড়ম্বর ও নান্দনিক এ অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার ৯টি বেসরকারি পাঠাগার এবং কারাগারসহ ১১টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৫৯টি করে বই বিতরণ করা হয়। বইগুলোতে ছিল দেশি-বিদেশি ক্লাসিক, ভ্রমণকাহিনী, আত্মউন্নয়নমূলক গ্রন্থ, জীবনী ও ধর্মীয় দর্শনভিত্তিক রচনা।
বই বিতরণকালে জেলা প্রশাসক বলেন, “বই যেকোনো পাঠককে বাস্তবতা থেকে অন্য এক জগতে নিয়ে যায়, যেখানে মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ জাগ্রত হয়। শুদ্ধ জ্ঞানচর্চার জন্য বইয়ের কোনো বিকল্প নেই।”
তিনি ‘পালামৌ’, ‘দেশে বিদেশে’, ‘ড. জেকিল ও মিস্টার হাইড’, ‘সত্যের সন্ধানে’, ‘কপালকুণ্ডলা’ ও ‘বিষাদসিন্ধু’র মতো গ্রন্থের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এসব বই শুধু পাঠকের কল্পনা প্রসারিত করে না, বরং নৈতিকতা, জীবনদর্শন ও আত্মশুদ্ধির পথও দেখায়।
জেলা প্রশাসক বিতরণকৃত বইগুলোর উপর আলোচনা করতে যেয়ে জেলা বলেন, 'পালামৌ', দেশে বিদেশের মতো ভ্রমণকাহিনী পাঠককে দেশ ভ্রমণের উৎসাহ যেমন জাগাবে তিনি আরো বলেন
তিনি ডক্টর জেকিল ও মিস্টার হাইড মানব চরিত্রের মনুষ্যত্ব ও পশুত্বের দ্বন্দ্বের এক অনিঃশেষ লড়াই যেমন তুলে ধরে তেমনি ইমাম গাজ্জালীর সত্যের সন্ধানে বই পাঠককে সঠিক পথের সন্ধানে পাথেয় যোগায়। রাশিয়া, জাপানের প্রকৃতি জানতে পাঠক যখন উৎসুক হয়ে ওঠে তার সাথে বঙ্কিমের কপাল কুণ্ডলা, মীর মশাররফ এর বিষাদসিন্ধু পাঠককে মানব চরিত্রের সুলুক সন্ধানের দাবি জানায়।
ডিসি জাহিদুল ইসলাম বলেন, “শুধু পাঠ্যবই পড়ে ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব, কিন্তু মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়তে হলে বাইরের জগতের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও মূল্যবোধ অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের বই পড়া জরুরি। পাঠচর্চা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, যা যুবসমাজকে নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে।”
বইকে মানুষের জ্ঞানের সঙ্গী হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন বই যেকোনো পাঠককে ক্ষণিকের মাঝেই বাস্তব জগৎ থেকে এমন এক রাজ্যে নিয়ে যায় যেখানে মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ জাগ্রত হয়। মনন ও আত্মশুদ্ধির জন্য বই এর কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি জানান। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে পাঠকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পেলেও শুদ্ধ জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র তৈরির জন্য পাঠকের বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করার প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। পাশাপাশি বইকে শুধু পড়ার জন্য নয়, বই থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনে প্রয়োগের তিনি আহ্বানও জানান।
জেলা প্রশাসক বলেন ভালো মানুষ হিসেবে গড়তে চাইলে পাঠ্যবই ছাড়াও অন্যান্য বই আমাদের পড়তেই হবে। কিভাবে বড়দের সম্মান করতে হবে,কিভাবে আপনার জীবন পরিচালিত করবেন,আপনার জীবনের কি কি সীমাবদ্ধতা,সেটা জানতে আমাদের প্রচুর বই পড়তে হবে।
জীবনটা ছোট নয়,জীবনটা যে অনেক বড়,সেটা বুঝতে হলেও পাঠ্যবইয়ের বাইরে অনেক পড়াশোনা করতে হবে আমরা যদি বেশি বেশি বই না পড়ি,তাহলে আমাদের কনফিডেন্স লেভেল বাড়বে না। আর কনফিডেন্স লেভেল বাড়লে,বাইরে খারাপ জিনিস আপনাকে প্রভাবিত করতে পারবে না। কারাগারে পাঠচর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বন্দীদের সুপথে আনতে বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
পাঠাগার কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বইগুলো শুধু সাজিয়ে রাখবেন না। এগুলো জেলার সব মানুষের সম্পদ। সবাই যেন সহজে পড়ার সুযোগ পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও প্রযুক্তি) মো: মাশফাকুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ) মোঃ আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী এবং জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বক্তারা যুগোপযোগী ও বিজ্ঞানভিত্তিক বই নির্বাচনের জন্য জেলা প্রশাসককে সাধুবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে বিষয়ভিত্তিক বৈচিত্র্য বাড়ানোর আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগকে নারায়ণগঞ্জে পাঠচর্চার নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা তরুণ সমাজের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারীরা।



