Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভাঙন আতংকে কাটে ৩০ গ্রামের মানুষের নির্ঘুম রাত

Icon

সিলেট প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১১:১১ এএম

ভাঙন আতংকে কাটে ৩০ গ্রামের মানুষের নির্ঘুম রাত

ছবি - সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে ছাতক-আন্ধারীগাঁও ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কে ভাঙন

ঘুমের মধ্যে আগ্রাসী নদী ভিটাবাড়িসহ ভাসিয়ে নেয় কিনা– সেই ভয়ে জেগে থেকে রাত পার করছেন ৩০টি গ্রামের মানুষ। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকে সুরমা নদীর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে ওই গ্রামগুলো।

বর্তমান পরস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ছাতক-আন্ধারীগাঁও ভায়া সুনামগঞ্জ সড়ক। এই সড়ক ধরে নিজেদের যুক্ত করে রেখেছে সুনামগঞ্জ, ছাতকসহ তিনটি উপজেলার ৩০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এই সড়ক এবং সেখানে থাকা সেতুটি ভেঙে পড়ার উপক্রম। যে কারণে সড়কপথের যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এই সড়কের চলমান নির্মাণকাজে অনিয়মের কারণেই সড়ক ও সেতু দুর্বল হয়েছে। নদীভাঙনের প্রবণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। তবে উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষ বলছে, ঠিকাদারের টেকসই কাজ সম্পন্ন করতে নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। সড়কটি রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ছাতক সদর ইউনিয়নের আওতাধীন সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে ছাতক-আন্ধারীগাঁও ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কের অবস্থান। ২০২২ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় গ্রামীণ এই সড়কটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) আওতাধীন সম্প্রতি এই সড়কের ছাতক অংশে প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারে জন্য ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের মেসার্স মমিনুল হক এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত বছরের আগস্ট মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

গত ১ সেপ্টেম্বর সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু করা হয়। এ কাজের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এরই মধ্যে সংস্কারকাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়ক মেরামত কাজ চলমান থাকতেই দেখা দেয় নদীভাঙন। কাজের শুরুতে স্থানীয় লোকজন নানা অনিয়মের অভিযোগ করলেও ঠিকাদার এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে নিজের ইচ্ছামতোই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে গ্রামের বাসিন্দাদের ভিটাবাড়ি এবং ফসলি জমিও রয়েছে হুমকির মুখে। 

সুরমার ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন একটি মাজারের পাশ থেকে শুরু হয়েছে ভাঙন; যা গত কয়েকদিনে মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে সড়কের পাকা অংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এখানে বালুর বস্তা দিয়ে দায়সারা কাজ সম্পন্ন করেছেন। এরই মধ্যে বেশকিছু বালুর বস্তা নদীতে ভেসে গেছে। নতুন সংস্কার কাজের বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে এবং সেখান থেকে মাটি ধসে যাচ্ছে।

অপরদিকে সড়কের মাছুখালী ব্রিজের অ্যাপ্রোচের পশ্চিমাংশ ভেঙে মাটি সরে যাওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় লোকজন এখানে গাড়ি চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বাঁশ বেঁধে রেখেছে। ব্রিজটি বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে, ভাঙনের মাত্রা আরেকটু বাড়লে তা ধসে যাবে। সেক্ষেত্রে সুনামগঞ্জের সঙ্গে আশপাশের দুটি উপজেলার এ পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

ছাতক সদর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী ও নোয়াব আলী বলেন, ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুমায় না গ্রামের মানুষ। নিজের সহায় সম্পদ হারানোর পাশাপাশি রাস্তা আর সেতু ভেঙে পড়ার ভয়ও রয়েছে। ভাঙনরোধে যে বস্তা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যে কোনো সময় ভেসে যাবে। দুদিন পরই বস্তাগুলো নদীতে চলে গেছে। এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এ রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ, যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মাছুখালী এলাকার বাসিন্দা সমুজ আলী বলেন, মল্লিকপুর-মাছুখালীর মাঝখানে যে সেতুটি রয়েছে এটি এখন প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে আছে। দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয়রা সেতুর পশ্চিম পাশে বাঁশ বেঁধে দিয়েছেন। এ সড়ক রক্ষায় নদীভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সালেক মিয়া তা অস্বীকার করে বলেন, সড়কের কাজ শেষ পর্যায়ে। নদীভাঙনের বিষয়টি তাদের দায়বদ্ধতা নয়। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখবে।

ছাতক উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কের মল্লিকপুর ও মাছুখালীর ঝুঁকিপূর্ণ অংশ পরিদর্শন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সড়কটি নদীভাঙন থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।


Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন