Logo
Logo
×

সারাদেশ

যশোর বিমানবন্দর : রানওয়ে সংস্কারে ধীরগতি, কাজের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন

Icon

তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর :

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০২:১৭ পিএম

যশোর বিমানবন্দর : রানওয়ে সংস্কারে ধীরগতি, কাজের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন

ছবি - সংগৃহীত

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালে যশোর বিমানবন্দর নির্মিত হয়। এটি দেশের সবচেয়ে পুরনো বিমানবন্দর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের একমাত্র বিমানবন্দর। এমনকি দেশের একমাত্র বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এটি। যশোরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির ফলে ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর ২৮২০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৪৫ মিটার প্রস্থের বিমানবন্দরের রানওয়ে সংস্কারে ৩৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে কাজের দু'বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত মাত্র ১৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।


এর আগেও রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে নামমাত্র কাজ করায় রানওয়ে ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবরে  রানওয়ে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। কাজটি শেষ হওয়ার মেয়াদ আগামী অক্টোবরে। তবে গত দুই বছরে মাত্র ৫০০ মিটার কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি, যা মোট কাজের ১৭ শতাংশ। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ঢাকার তেজগাঁওয়ের তানভির কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাগিয়ে নেয় । তবে অজ্ঞাত কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি শেষ করতে পারেনি। আর মাত্র আছে কয়েক মাস বাকি। কাজের সিডিউল সময় শেষের দিকে হওয়াতে রাত ৮টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।  এমনটি জানিয়েছে বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র।

বাকি কাজ কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে তা জানে না কেউ।  উন্নয়নে ধীরগতির ফলে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। উন্নয়নের কাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন যশোরবাসী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক হওয়ার কারণে ৩শ’ ৭৫ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রানওয়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যাতে সুপরিসরে বিমান রানওয়েতে ওঠানামা করতে পারে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির গাফিলতিতে যথাসময়ে কাজ শুরু হয়নি। এর ফলে নির্ধারিত সময় কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজ সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত আরো এক থেকে দুই বছর লেগে যাওয়ার শষ্কা তৈরি হয়েছে । এর ফলে বিমানবন্দরের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। তাছাড়া দিনের আলোয় কাজ না করে রাতের আঁধারে কাজ করায় নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা ।

বুধবার সরেজমিনে গেলে ঠিকাদারের লোকজন প্রকল্প এলাকায় সাংবাদিকদের যেতে বাধা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে তাদের বাধা ডিঙিয়ে প্রজেক্টের ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, নিম্নমানের পাথর ও পাথরের ডাস্টের গুঁড়া স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো পাশে ওয়েস্টেজ পাথরও রাখা হয়েছে। রাতের আঁধারে এগুলো মিক্সিং করেই রানওয়ের কাজ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিমানবন্দরের কয়েকজন স্টাফ জানান, আগের ঠিকাদাররা সঠিকভাবে কাজ না করায় বিমানবন্দরের রানওয়ে এবড়ো-থেবড়ো হয়ে গেছে। ছোট বিমানগুলো যখন রানওয়েতে নামে তখন মনে হয় পাহাড়ের উপর দিয়ে বিমান চলছে। তবে বর্তমান ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ের কাজ করতে না পারায়, এখন রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে কাজ চলিয়ে যাচ্ছে। এভাবে কাজ হলে কাজের গুণগত মান ঠিক থাকবে না। তাই বিমানবন্দরের রানওয়ে আগের মতো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যশোর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ পাভেল চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশের ঠিকাদার সম্পর্কে সরকারি কাজ নিয়ে সবারই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নামসর্বস্ব প্রকল্প দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একশ্রেণির আমলা ও রাজনৈতিক দলের নামসর্বস্ব দলীয় ঠিকাদাররা। দিনের কাজ রাতে করা হলে তা হলে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ঠিকাদার যা মনে চায় তাই করবে।

রাতে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির পিজিএম শাহাদাত হোসেন বলেন, দিনে বিমান চলাচল করে, তাই আমরা রাতেই কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।

কাজের নিতিমালা সম্পর্কে বিমানবন্দর উন্নয়নের পরিচালক পিডি আমিনুল হকের মুঠোফোনে সংযোগ দিয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না বলে জানান। কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নাকি তার ফোনে নজরদারি করেন। তাই তিনি এ বিষয়ে বিমানবন্দর চেয়ারম্যানের পিএস চিপ ইঞ্জিনিয়ার জাকারিয়ার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

বিষয়টি নিয়ে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, দিনের বেলা বিমান ওঠানামার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি রাতের বেলায় কাজ করছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সেনাবাহিনীর এলাকা। বিমানবন্দরটি সেনানিবাসের পেটের মধ্যে। জায়গা সংকটের কারনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাজের যন্ত্রাংশ আনতে পারেনি। তাই দেরি করে কাজ শুরু করেছে। কাজের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ দেখাশোনার জন্য কুয়েটের কনসালটেন্সি রয়েছে। তারা কাজ দেখাশোনা করছে। তাই কাজের গুণগত মান সম্পর্কে তারাই ভাল বলতে পারবে বলে তিনি জানান।

বিষয়টি নিয়ে সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যানের (পাবলিক রিলেশন অফিসার) চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাকারিয়া হোসেনের মুঠোফোনে কয়েক দফায় সংযোগ দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রতিদিন যশোর বিমানবন্দর থেকে ৯টি বিমান চলাচল করছে। এছাড়া কক্সবাজার থেকে চিংড়ি মাছের পোনা নিয়ে এই বিমানবন্দরে প্রতিদিন একাধিক কার্গো বিমান আসা-যাওয়া করে। সবজি ভাণ্ডার যশোর থেকে প্রতিদিন কয়েক ট্রাক সবজি ঢাকায় যায়। ঢাকা থেকে এই সবজির কিছু অংশ বিদেশেও রপ্তানি হয়। বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানের হলে যশোর থেকে বিদেশে কার্গো বিমান চালু হবে। ফলে সবজির পাশাপাশি যশোরে উৎপাদিত উন্নতমানের ফুল বিদেশে সহজে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তাতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। বিমানবন্দর চালু হওয়ার পরপর  বিদেশ থেকে এই বন্দর ব্যবহারকারীরা বিমানে ঢাকা হয়ে যশোরে আসে। যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ জেলার যাত্রীরা যশোর বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। কিন্তু যশোর বিমানবন্দরে ছোট অবকাঠামোর কারণে বাড়তি যাত্রীর চাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। এছাড়া এই ১০ জেলার হাজার হাজার মানুষ হজব্রত পালন ও চাকরি, ব্যবসার কাজে ঢাকা হয়ে বিদেশ যান। কিন্তু যশোর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত হলে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক গতি ফিরবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন