‘এমন মৃত্যু যেন আল্লাহ কাউকে না দেয়’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:০২ পিএম
ছবি-সংগৃহীত
লাশ নেয়নি কেউ, বাবার মৃত্যুর খবরে ফোন বন্ধ করে দিলেন ছেলেও। এমন মৃত্যু যেন আল্লাহতালা কাউকে না দেন। আক্ষেপ করে বললেন একটি সমাজসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আজাহার উদ্দিন।
অপরিচিত এক ব্যক্তির কবর খোঁড়ার কাজ করছিলেন আজাহার উদ্দিন। তাকে ফোন করায় অপর প্রান্ত থেকে হাঁপাচ্ছিলেন তিনি। বললেন ভাই, আমি কবর খুঁড়ছি। আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।’-
আজহার উদ্দিনের মতো আরো কয়েকজন ইব্রাহিম নামে ষাটোর্ধ্ব এক জনের দাফনের জন্য কবর খুঁড়ছিলেন। অথচ তার মৃত্যুর খবর শুনে এড়িয়ে যান ছেলে। তাই বলে তো লাশ রাখা যায় না। তাই পুলিশের অনুমতি নিয়ে তারা লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।
মৃত ইব্রাহিমের ছেলে লাশ গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি দাফন কাজেও শরিক হতে চাননি। এক পর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ইব্রাহিম নামে ওই ব্যক্তি গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে মারা যান।
খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। অনেক চেষ্টার পর তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। বিষয়টি তার একমাত্র ছেলে ইসরাফিল সিয়ামকে জানানো হয়। কিন্তু তিনি লাশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত ‘বাতিঘর’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে মঙ্গলবার বিকেলে ইব্রাহিমের লাশ দাফন করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) ওহিদুর রহমান চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘ওই ব্যক্তির কাছে দিনাজপুর এলাকার কয়েকজনের ভিজিটিং কার্ড পাওয়া যায়। ওইসব নম্বরে যোগাযোগ করে জানতে পারি, সেখানে তিনি একটি মাদরাসায় চাকরি করতেন। কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগের পর জানা যায় ওনার এক ছেলে আছে। ওই ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লাশ গ্রহণ কিংবা দাফনে অংশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে দেন।’
ছেলের বরাত দিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম মূলত হিন্দু ধর্মালম্বী ছিলেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তিনি প্রায় ৩০ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার এক নারীকে বিয়ে করেন। ওই নারীর গর্ভে এক ছেলেসন্তান হয়। কিন্তু ওই নারী ছেলেসহ আরেকজনকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে ওই নারী আর ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি।
বাতিঘর নামে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আজহার উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে মূলত বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়। প্রতিষ্ঠার চার বছরে ২০০ জনের লাশ দাফন করেছি। কিন্তু ইব্রাহিম নামে ওই ব্যক্তির ছেলে থাকা সত্ত্বেও তাকে এভাবে দাফন করার বিষয়টি আমাদেরকে খুব কষ্ট দিয়েছে। পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা লাশ দাফনের উদ্যোগ নেই। মঙ্গলবার বিকেলে লাশ দাফন সম্পন্ন হয়। তবে ওই ব্যক্তির পরিবারের কোনো সদস্য সেখানে ছিলেন না।’



