বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ : বিপদে দাউদকান্দির মানুষ
দাউদকান্দি প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম
ছবি - বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পাত্রে এডিস মশার লার্ভা
কুমিল্লার দাউদকান্দির লোকজন মনে করেন, বৃষ্টির পানি দিয়ে রান্না করলে ভাত সুস্বাদু হয়। এমন ধারণা থেকে পৌরসভার বাসিন্দারা বিভিন্ন পাত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করেন। এসব পাত্রে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের পরামর্শে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বৃষ্টির পানি পাত্র থেকে ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পৌর এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত দুই মাসে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। হাজারের ওপর লোক আক্রান্ত। এরপর দৌড়ঝাঁপ শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ডেঙ্গুর উৎস খুঁজতে দাউদকান্দিতে গিয়ে অনুসন্ধান চালায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ। এতে পাত্রে রাখা পানি ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে এডিশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জুন মাসের শুরু থেকে পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ‘হটস্পট’ ঘোষণা করে প্রশাসন। রান্নার কাজে দাউদকান্দি পৌরসভার প্রায় প্রতিটি ঘরে বৃষ্টির পানি প্লাস্টিক বা মাটির পাত্রে জমিয়ে রাখার প্রবণতা রয়েছে। সেসব পাত্রে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে এডিস মশার লার্ভা। এ থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে বাড়ির লোকজন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৬ দিনে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৯৫ জন। যেখানে পুরো জেলায় সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৪।
পৌর এলাকার সবজিকান্দির বাসিন্দা রোনা আক্তার বলেন, পানির পাত্রে এডিস মশার লার্ভা থাকবে, তা পৌরসভা কিংবা কোনো সংস্থা থেকে জানানো হয়নি।
দাউদকান্দি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমন খন্দকার বলেন, পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে হটস্পট ঘোষণা করা হয়েছে। ওই দুটি ওয়ার্ডে পৌর কর্তৃপক্ষ অনেক আগে থেকে পানি সরবরাহ করে। লোকজন উপকারিতা ভেবে বৃষ্টির পানি পাত্রে সংরক্ষণ করছে।
জেলার কীটতত্ত্ববিদ আল ইমরান ভূঁইয়া বলেন, সবজিকান্দিতে গিয়ে প্রায় সব বাড়িতে বৃষ্টির পানি জমানোর পাত্র দেখেছি। সেগুলোতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য বাইরের কিছু নয়, বরং বাড়ির এই পানির পাত্রগুলো দায়ী। আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে সেসব ড্রাম দ্রুত অপসারণের পরামর্শ দিয়েছি। এ কাজ শুরু হয়েছে।
দাউদকান্দি পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদোয়ান ইসলাম বলেন, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পাত্রে বিপুল পরিমাণ এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এটি ঘরে ঘরে ডেঙ্গু ছড়ানোর অন্যতম কারণ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব জমানো পানি ফেলে দিয়ে এসেছি। সবাইকে সচেতন হতে হবে। এসব পানি যতদিন না ফেলা হবে, ততদিন ডেঙ্গু সংক্রমণ কমবে না।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ১ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৫০ জন। বৃহস্পতিবার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন ১১ জন। গত দুই মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ছয়জন।



